পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২০৬

Sbbr রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী নিমেষ-’পরেই উগরে দিয়ে মেলায়াশাচ্ছায়ার মতো, সূর্যদেবের গায়ে কোথাও রয় না কোনো ক্ষত । বারে বারে সহস্রাবার হয়েছে এই খেলা, নতুন রাহু ভাবে তবু হবে না মোর বেলা । কাণ্ড দেখে পশুপক্ষী ফুকরে ওঠে। ভয়ে, অনন্তদেব শান্ত থাকেন ক্ষণিক অপচয়ে । টুটিল কত বিজয়-তোরণ, লুটিল প্ৰাসাদ-চুড়ো, কত রাজার কত গারদ ধুলোয় হল গুড়ো । আলিপুরের জেলখানাও মিলিয়ে যাবে যাবে তখনো এই বিশ্বদুলাল ফুলের সবুর সবে । রঙিন-কুর্তি সঙিন—মূর্তি, রইবে না কিছুই, তখনো এই বনের কোণে ফুটবে লাজুক জুই । ভাঙবে শিকল টুকরো হয়ে, ছিড়বে রাঙা পাগচূৰ্ণ-করা দৰ্পে মরণ খেলবে হােলির ফাগ । পাগলা আইন লোক হাসাবে কালের প্রহসনে, মধুর আমার বঁধু রবেন কাব্যসিংহাসনে । সময়েরে ছিনিয়ে নিলেই হয় সে অসময়, ক্রুদ্ধ প্রভুর সয় না। সবুর, প্রেমের সবুর সয় । প্ৰতাপ যখন চেচিয়ে করে দুঃখ দেবার বড়াই, জেনো মনে, তখন তাহার বিধির সঙ্গে লড়াই । ঃখ সাহার তপস্যাতেই হোক বাঙালির জয়, ভয়কে যারা মানে তারাই জাগিয়ে রাখে ভয় । মৃত্যুকে যে এড়িয়ে চলে মৃত্যু তারেই টানে মৃত্যু যারা বুক পেতে লয় বঁাচতে তারাই জানে । পালোয়ানের চেলারা সব ওঠে যেদিন খেপে, ফোসে সৰ্প হিংসাদৰ্প সকল পৃথ্বী ব্যেপে, বীভৎস তার ক্ষুধার জ্বালায় জাগে দানব ভায়া, গৰ্জি বলে ‘আমিই সত্য- দেবতা মিথ্যা মায়া”, সেদিন যেন কৃপা আমায় করেন। ভগবান— মেশিন-গানের সম্মুখে গাই জুই ফুলের এই গান ৷— স্বপ্নসম পরিবাসে এলি পাশে কোথা হতে তুই ও আমার জুই ! অজানা ভাষার দেশে সহসা-বলিলি এসে, “আমারে চেন কি ৷” হৃদয় উঠিল গেয়ে, “চিনি, চিনি সখী !” কত প্ৰাতে জানায়েছে চিরপরিচিত তোর হাসি, “আমি ভালোবাসি ।”