পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S ܔ রবীন্দ্র-রচনাবলী আজকে হঠাৎ ধরিত্রী তার আকাশভরা সকল আলো ধরে বর-বধূরে নিলে বরণ করে । রোগা মুখের মস্ত বড়ো দুটি চোখে বিনুর যেন নতুন করে শুভদৃষ্টি হল নতুন লোকে । রেল-লাইনের ওপার থেকে কঙাল যখন ফেরে। ভিক্ষা হেঁকে, বিনু আপনি বাক্স খুলে টাকা সিকে যা হাতে পায় তুলে কাগজ দিয়ে মুড়ে দেয় সে ছুড়ে ছুড়ে | সবার দুঃখ দূর না হলে পরে আনন্দ তার আপনারই ভার বইবে কেমন করে । সংসারের ওই ভাঙা ঘাটের কিনার হতে আজ আমাদের ভাসান যেন চিরপ্রেমের স্রোতেতাই যেন আজ দানে ধ্যানে ভারতে হবে সে-যাত্রাটি বিশ্বের কল্যাণে । নিখিলে আজ একলা শুধু আমিই কেবল তার ; কেউ কোথা নেই। আর শ্বশুর ভাশুর সামনে পিছে ডাইনে বায়ে ; সেই কথাটা মনে ক’রে পুলক দিল গায়ে । বিলাসপুরের ইস্টেশনে বদল হবে গাড়ি ; তাড়াতাড়ি নামতে হল । ছ-ঘণ্টা কাল থামতে হবে যাত্রীশালায়, মনে হল এ এক বিষম বালাই ! বিনু বললে, “কেন, এ তো বেশ ।” তার মনে আজ নেই যে খুশির শেষ । পথের বাশি পায়ে পায়ে তারে যে আজ করেছে। চঞ্চলা আনন্দে তাই এক হল তার পৌছনো আর চলা | “দেখো, দেখো, এক্কাগাড়ি কেমন চলে । আর দেখেছ বাছুরটি ওই, আ মরে যাই, চিকন নধর দেহ, মাযের চোখে কী সুগভীর স্নেহ । ওই যেখানে দিঘির উচু পাড়ি ওই যে রেলের কাছে— ইস্টেশনের বাবু থাকে ?— আহা ওরা কেমন সুখে আছে।” যাত্রীঘরে বিছানাটা দিলেম পেতে, বলে দিলেম, “বিনু এবার চুপটি করে ঘুমোও আরামেতে ।”