পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NRKOV রবীন্দ্র-রচনাবলী পঞ্চক । শোন বলি সুভদ্র, কিসে কী হয় আমি ভাই কিছুই জানি নে— কিন্তু যাই হােক-না, আমি তাতে একটুও ভয় করি নে । সুভদ্র । ভয় কর না ? সকল ছেলে । ভয় কর না ? পঞ্চক । না । আমি তো বলি, দেখিাই-না কী হয় । সকলে । (কাছে ঘেঁষিয়া) আচ্ছা দাদা, তুমি বুঝি অনেক দেখেছ ? পঞ্চক। দেখেছি বৈকি। ও মাসে শনিবারে যেদিন মহামায়ূরী দেবীর পূজা পড়ল, সেদিন আমি কাসার থালায় ইদুরের গর্তের মাটি রেখে, তার উপর পাচটা শেয়ালকাটার পাতা আর তিনটি মাষকলাই সাজিয়ে নিজে আঠারো বার ফু দিয়েছি। সকলে । আঁ্যা ! কী ভয়ানক ! আঠারো বার ! সুভদ্র । পঞ্চকদাদা, তোমার কী হ’ল ? পঞ্চক । তিনদিনের দিন যে সাপটা এসে আমাকে নিশ্চয় কামড়াবে কথা ছিল, সে আজ পর্যন্ত আমাকে খুঁজে বের করতে পারে নি। প্ৰথম । কিন্তু ভয়ানক পাপ করেছ তুমি । দ্বিতীয়। মহামায়ূরী দেবী ভয়ানক রাগ করেছেন। পঞ্চক। তার রাগটা কী রকম সেইটে দেখবার জন্যেই তো এ কাজ করেছিা! সুভদ্র। কিন্তু পঞ্চকদাদা, যদি তোমাকে সাপে কামড়াত ! পঞ্চক । তা হলে মাথা থেকে পা পর্যন্ত কোথাও কোনো সন্দেহ থাকত না— ভাই সুভদ্র, জানলা খুলে তুই কী দেখলি বল দেখি । দ্বিতীয় । না না, বলিস নে । তৃতীয় । না, সে আমরা শুনতে পারব না— কী ভয়ানক ! প্রথম । আচ্ছা, একটু— খুব একটুখানি বল ভাই । সুভদ্র । আমি দেখলুম। সেখানে পাহাড়, গোরু চরছে— বালকগণ । (কানে আঙুল দিয়া) ও বাবা, না না, আর শুনব না। আর বোলো না সুভদ্র। ঐ-যে উপাধ্যায়মশায় আসছেন । চল চলা- আর না । পঞ্চক । কেন ? এখন তোমাদের কী ? প্রথম । বেশ, তাও জান না বুঝি ? আজ যে পূর্বফল্গুনী নক্ষত্র পঞ্চক । তাতে কী ? দ্বিতীয়। আজ কাকিনী সরোবরের নৈর্ধত কোণে টোড়া সাপের খোলস খুঁজতে হবে না ? পঞ্চক । কেন রে ? প্রথম । তুমি কিছু জান না পঞ্চকদাদা। সেই খোলস কালো রঙের ঘোড়ার লেজের সাতগাছি চুল দিয়ে বেঁধে পুড়িয়ে ধোয়া করতে হবে যে । দ্বিতীয়। আজ যে পিতৃপুরুষেরা সেই ধোয়া ব্ৰাণ করতে আসবেন। পঞ্চক । তাতে তাদের কষ্ট হবে না ? প্রথম । পুণ্য হবে যে, ভয়ানক পুণ্য । [সুভদ্র ব্যতীত বালকগণের প্রস্থান উপাধ্যায়ের প্রবেশ সুভদ্র । উপাধ্যায়মশায় ! ar পঞ্চক । আরো পালা পালা। উপাধ্যায়মশায়ের কাছ থেকে একটু পরমার্থতত্ত্ব শুনতে হবে, এখন বিরক্তি করিস নে, একেবারে দৌড়ে পালা । ,