পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

RGło রবীন্দ্র-রচনাবলী পঞ্চক । আমিই তো ভাই, এতদিন লোক হাসিয়ে আসছি— তোরা আমাকেও হাসাবি- শুনেও মন খুশি হয়। কিছু ভাবিস নে— নিৰ্ভয়ে শুনিয়ে দে। প্ৰথম দৰ্ভক । আচ্ছা ভাই, আয় তবে- গান ধর । গান ও অকুলের কুল, ও অগতির গতি, ও অনাথের নাথ, ও পতিতের পতি । ও নয়নের আলো, ও রসনার মধু, ও রতনের হার, ও পরানের বঁধু । ও অপরূপ রূপ, ও মনোহর কথা, ও চরমের সুখ, ও মরমের ব্যথা । ও ভিখারির ধন, ও অবোলার বোল— ও জনমের দোলা, ও মরণের কোল । পঞ্চক। দে ভাই, আমার মন্ত্রতন্ত্র সব ভুলিয়ে দে, আমার বিদ্যাসাধ্যি সব কেড়ে নে, দে আমাকে তোদের ঐ গান শিখিয়ে দে । আচার্যের প্রবেশ প্রথম দৰ্ভক । বাবাঠাকুর, আমাদের সমস্ত পাড়া আজ ত্ৰাণ পেয়ে গেল। এতদিন তোমার চরণগুলো তো এখানে পড়ে নি । আচাৰ্য । সে আমার অভাগ্য, সে আমারই অভাগ্য । দ্বিতীয় দৰ্ভক । বাবা, তোমার মানের জল কাকে দিয়ে তোলাব ? এখানে তোআচার্য। বাবা, তোরাই তুলে আনবি । প্রথম দৰ্ভক। আমরা তুলে আনব- সে কি হয় ! আচার্য। ই বাবা, তােদের তোলা জলে আজ আমার অভিষেক হবে। দ্বিতীয় দৰ্ভক । ওরে চল তবে ভাই চল। আমাদের পািটলা নদী থেকে জল আনি গে। [দর্ভকদলের প্রস্থান পঞ্চক । মনে হচ্ছে যেন ভিজে মাটির গন্ধ পাচ্ছি, কোথায় যেন বর্ষা নেমেছে। আচার্য। ঐ, পঞ্চক শুনতে পােচ্ছ কি ? পঞ্চক । কী বলুন দেখি ? : আচাৰ্য । আমার মনে হচ্ছে যেন সুভদ্ৰ কঁদছে। পঞ্চক। এখান থেকে কি শোনা যাবে ? এ বােধ হয়। আর কোনাে শব্দ । আচার্য। তা হবে পঞ্চক, আমি তার কান্না আমার বুকের মধ্যে করে এনেছি। তার কান্নাটা এমন སྨད་ལ་གསང་ বেজেছে কেন জান ? সেযে কান্না-রাখতে পারে না। তবু কিছুতে মানতে চায় না সে পঞ্চক । এতক্ষণে ওরা তাকে মহাতামসে বসিয়েছে— আর সকলে মিলে খুব দূরে থেকে বাহবা দিয়ে বলছে, সুভদ্র দেবশিশু । আর কিছু না, আমি যদি রাজা হতুমি তা হলে ওদের সবাইকে কানে ধরে দেবতা করে দিতুম— কিছুতে ছাড়াতুম না । আচাৰ্য । ওরা ওদের দেবতাকে কঁদোচ্ছে পঞ্চক । সেই দেবতারই কান্নায় এ রাজ্যের সকল আকাশ আকুল হয়ে উঠেছে। তবু ওদের পাষাণের বেড়া এখনো শতধা বিদীর্ণ হয়ে গেল না । দৰ্ভকদলের প্রবেশ পঞ্চক । কী ভাই, তোরা এত ব্যস্ত কিসের ?