পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/২৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(?8 রবীন্দ্র-রচনাবলী উপাধ্যায়ের প্রবেশ মহাপঞ্চক। কত দূর ? উপাধ্যায়। কত দূর কী ? এসে পড়েছে যে । মহাপঞ্চক । কই দ্বারে তো এখনো শাখ বাজালে না ? উপাধ্যায়। বিশেষ দরকার দেখি নে- কারণ দ্বারের চিহ্নও দেখতে পাচ্ছি নে- ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে । মহাপঞ্চক । বল কী, দ্বার ভেঙেছে ? উপাধ্যায়। শুধু দ্বার নয়, প্রাচীরগুলোকে এমনি সমান করে শুইয়ে দিয়েছে যে তাদের সম্বন্ধে আর কোনো চিন্তা করবার দরকার নেই। ঐ দেখছি না। আলো । মহাপঞ্চক । কিন্তু আমাদের দৈবজ্ঞ যে গণনা করে স্পষ্ট দেখিয়ে দিয়ে গেল যে— উপাধ্যায়। তার চেয়ে ঢের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে শত্রুসৈন্যদের রক্তবর্ণ টুপিগুলো | এই যে সব ফাক হয়ে গেছে । ছাত্ৰগণ । কী সর্বনাশ ! সঞ্জীব । কিসের মন্ত্র তোমার মহাপঞ্চক ? বিশ্বম্ভর । আমি তো তখনই বলেছিলুম, এ-সব কাজ এই কঁচা বয়সের পুঁথিপড়া অকালপক্কদের দিয়ে হবার নয় । সঞ্জীব । কিন্তু এখন করা যায় কী ? জয়োত্তম । আমাদের আচার্যদেবকে এখনই ফিরিয়ে আনি গে । তিনি থাকলে এ বিপত্তি ঘটতেই পারত না । হাজার হােক লোকটা পাকা । সঞ্জীব । কিন্তু দেখো মহাপঞ্চক, আমাদের আয়তনের যদি কোনো বিপত্তি ঘটে তা হলে তোমাকে টুকরো টুকরো করে ছিড়ে ফেলব। উপাধ্যায়। সে পরিশ্রমটা তোমাদের করতে হবে না, উপযুক্ত লোক আসছে। মহাপঞ্চক । তোমরা মিথ্যা বিচলিত হচ্ছি। বাইরের প্রাচীর ভাঙতে পারে, কিন্তু ভিতরের লোহার দরজা বন্ধ আছে। সে যখন ভাঙবে তখন চন্দ্ৰসূৰ্য নিবে যাবে। আমি অভয় দিচ্ছি। তোমরা স্থির হয়ে দাড়িয়ে অচলায়তনের রক্ষক-দেবতার আশ্চর্য শক্তি দেখে নাও । উপাধ্যায়। তার চেয়ে দেখি কোন দিক দিয়ে বেরোবার রাস্তা । বিশ্বম্ভর । আমাদেরও তো সেই ইচ্ছা । কিন্তু এখান থেকে বেরোবার পথ যে জানিই নে { কোনোদিন বেরোতে হবে বলে স্বপ্নেও মনে করি নি । সঞ্জীব । শুনছ- ঐ শুনিছ, ভেঙে পড়ল সব । ছাত্ৰগণ । কী হবে আমাদের । নিশ্চয় দরজা ভেঙেছে । এই যে একেবারে নীল আকাশ | বালীকদলের প্রবেশ উপাধ্যায়। কী রে তোরা সব নৃত্য করছিস কেন ? প্রথম বালক । আজ এ কী মজা হল । উপাধ্যায়। মজাটা কী রকম শুনি ? দ্বিতীয় বালক । আজ চার দিক থেকেই আলো "ত" শছে--- সব যেন ফাক হয়ে গেছে । তৃতীয় বালক । এত আলো তো আমরা কোনোদিন দেখি নি । প্ৰথম বালক । কোথাকার পাখির ডাক এখান থেকেই শোনা যাচ্ছে । দ্বিতীয় বালক । এ-সব পাখির ডাক আমরা তো কোনোদিন শুনি নি । এ তো আমাদের খাচার ময়নার মতো একেবারেই নয় । প্রথম বালক । আজ আমাদের খুব ছুটতে ইচ্ছে করছে। তাতে কি দোষ হবে মহাপঞ্চকদাদা ?