পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অরূপরতন RS 9 সুৰঙ্গম । আহা কালকের রাতটা মনে হয়েছিল যেন কিছুতেই আর পােহাতে চায় না। সুদৰ্শন। কিন্তু বললে বিশ্বাস করবি নে, তারই মধ্যে বার বার আমার মনে হচ্ছিল কোথায় যেন তুর দ্বীণা বাজছে। যে নিষ্ঠুর, তার কঠিন হাতে কি আমন মিনতির সুর বাজে ? বাইরের লোক আমার সম্মানটাই দেখে গেল- কিন্তু গোপন রাত্রের সেই সুরাটা কেবল আমার হৃদয় ছাড়া আর তো কেউ নল না । সে বীণা তুই কি শুনেছিলি সুরঙ্গমা । না, সে আমার স্বপ্ন ? সুরঙ্গমা। সেই বীণা শুনব বলেই তো তোমার কাছে কাছে আছি। অভিমান-গলানো সুর বাজবে জেনেই কান পেতে পড়ে ছিলুম। | উভয়ের প্রস্থান গান নেব তোমার মালা । আজ নিশিশেষে শেষ করে দিই চোখের জলের পালা ৷ ফেলে দিলেম পথের ধারে, তোমার চরণ দেবে তারে মধুর পরশ পাষাণ-গালা ৷ ছিল আমার আঁধারখানি, তারে তুমিই নিলে টানি, তোমার প্রেম এল যে আগুন হয়ে করল। তারে আলা । সেই যে আমার কাছে আমি ছিল সবার চেয়ে দামি তারে উজাড় করে সাজিয়ে দিলেম তোমার বরণডাল ৷ প্ৰস্থান সুদৰ্শন ও সুরঙ্গমার পুনঃপ্রবেশ সুদৰ্শন । তার পণটাই রইল- পথে বের করলে তবে ছাড়লে । মিলন হলে এই কথাটাই তাকে বলব যে, আমিই এসেছি, তোমার আসার অপেক্ষা করি নি। বলব চোখের জল ফেলতে ফেলতে এসেছি— কঠিন পথ ভাঙতে ভাঙতে এসেছি। এ গর্ব আমি ছাড়ব না । সুরঙ্গমা ! কিন্তু সে গর্বও তোমার টিকবে না । সে যে তোমারও আগে এসেছিল। নইলে তোমাকে করার করে কার সাধা । সুদৰ্শন । তা হয়তো এসেছিল-- আভাস পেয়েছিলুম। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারি নি । যতক্ষণ অভিমান করে বসেছিলুম ততক্ষণ মনে হয়েছিল সেও আমাকে ছেড়ে গিয়েছে— অভিমান ভাসিয়ে দিয়ে যখনই রাস্তায় বেরিয়ে পড়লুম। তখনই মনে হল সেও বেবিয়ে এসেছে, রাস্তা থেকেই তাকে পাওয়া শুরু করেছি। এখন আমার মনে আর কোনো ভাবনা নেই । তার জন্যে এত যে দুঃখ এই দুঃখই আমাকে তার সঙ্গ দিচ্ছে ; এত কষ্টের রাস্তা আমার পায়ের তলায় যেন সুরে সুবে বেজে উঠছে । এ যেন আমার বীণা, আমার দুঃখের বীণা ; এবই বেদনার গানে তিনি এই কঠিন পাথরে, এই