পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○のbr রবীন্দ্র-রচনাবলী লক্ষেশ্বর । গান গাবার বুঝি সময় নেই ? আমার হিসােব লিখতে ভুল হয়ে যায় যে । আজ আমাৰ সমস্ত দিনটাই মাটি করলে । ঠাকুরদাদা। তা ঠিক ! হিসেব ভুলিয়ে দেবার ওস্তাদ ওরা। ওদের সাড়া পেলে আমার বয়সের হিসাবে প্রায় পঞ্চাশ পঞ্চান্ন বছরের গরমিল হয়ে যায়। ওরে বান্দরগুলো, আয় তো রে! চল তোদের পঞ্চাননতলার মাঠটা ঘুরিয়ে আনি । যাও দাদা, তোমার দপ্তর নিয়ে বোসো গে !! আর হিসেবে ভুল शहद क्रा | { লক্ষেশ্বরের প্রস্থান প্ৰথম । ই ঠাকুরদা চলো । দ্বিতীয় | আমাদের আজ গল্প বলতে হবে । তৃতীয়। না গল্প না, বটতলায় বসে আজ ঠাকুরদার পঁাচালি হবে। চতুর্থ। বটতলায় না, ঠাকুরদা আজ পারুলডাঙায় চলো । ঠাকুরদাদা। চুপ, চুপ, চুপ । অমন গোলমাল লাগাস যদি তো লখাদাদা আবার ছুটে আসবে। লক্ষেশ্বরের পুনঃপ্রবেশ লক্ষেশ্বর । কোন পোড়ারমুখে আমার কলম নিয়েছে রে । ['ছেলেদের লইয়া ঠাকুরদাদার প্রস্থান উপনন্দের প্রবেশ লক্ষেশ্বর ! কী রে তোর প্রভু কিছু টাকা পাঠিয়ে দিলে ? অনেক পাওনা বাকি । উপনন্দ । কাল রাত্রে আমার প্রভুর মৃত্যু হয়েছে। লক্ষেশ্বর। মৃত্যু ! মৃত্যু হলে চলবে কেন ? আমার টাকাগুলোর কী হবে ? উপনন্দ । তার তো কিছুই নেই। যে বীণা ৰাজিয়ে উপাৰ্জন করে তোমার ঋণ শোধ করতেন সেই বীণাটি আছে মাত্ৰ ! লক্ষেশ্বর । বীণাটি আছে মাত্র !! কী শুভ সংবাদটাই দিলে । উপনন্দ । আমি শুভ সংবাদ দিতে আসি নি । আমি একদিন পথের ভিক্ষুক ছিলেম, তিনিষ্ঠ আমাকে আশ্রয় দিয়ে তার বহুদুঃখের অন্নের ভাগে আমাকে মানুষ করেছেন । তোমার কাছে দাস : করে আমি সেই মহাত্মার ঋণ শোধ করব | লক্ষেশ্বর। বটে ! তাই বুঝি তার অভাবে আমার বহুদুঃখের অন্নে ভাগ বসাবার মতলব করেছ { আমি তত বড়ো গৰ্দভ নই। আচ্ছা, তুই কী করতে পারিস বল দেখি ! উপনন্দ । আমি চিত্ৰবিচিত্র করে পুঁথি নকল করতে পারি | তোমার অন্ন আমি চাই নে। আমি নিজে উপাৰ্জন করে যা পারি খাব- তোমার ঋণও শোধ করব । লক্ষেশ্বর | আমাদের বীনকারটিও যেমন নির্বোধি ছিল ছেলেটাকেও দেখছি ঠিক তেমনি করেই বানিয়ে গেছে। হতভাগা ছোড়াটা পরের দায় ঘাড়ে নিয়েই মরবে। এক-একজনের ঐ রকম মরাই স্বভাব ।-- আচ্ছা বেশ, মাসের ঠিক তিন তারিখের মধ্যেই নিয়মমত টাকা দিতে হবে । নইলে— উপনন্দ । নইলে আবার কী ! আমাকে ভয় দেখােচ্ছ মিছে। আমার কী আছে যে তুমি আমার কিছু করবে। আমি আমার প্রভুকে স্মরণ করে ইচ্ছা করেই তোমার কাছে বন্ধন স্বীকার করেছি। আমাকে ভয় দেখিয়ো না বলছি । লক্ষেশ্বর। না না, ভয় দেখাব না । তুমি লক্ষ্মীছেলে, সোনার চাদ ছেলে। টাকাটা ঠিকমত দিয়ে৷ বাবা । নইলে আমার ঘরে দেবতা আছে তার ভোগ কমিয়ে দিতে হবে- সেটাতে তোমারই পাপ। হবে । { উপনন্দের প্রস্থান