পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

OS\9 রবীন্দ্র-রচনাবলী উপনন্দ । ছোটাে বয়সে আমার বাপ মারা গেলে আমি অন্য দেশ থেকে এই নগরে আশ্রয়ের জনো এসেছিলেম । সেদিন শ্রাবণমাসের সকাল বেলায় আকাশ ভেঙে বৃষ্টি পড়ছিল, আমি লোকনাথের মন্দিরের এককোণে দাড়াব বলে প্রবেশ করছিলেম । পুরোহিত আমাকে বোধ হয় নীচ জাত মনে করে তাড়িয়ে দিলেন। সেদিন সকালে সেইখানে বসে আমার প্রভু বীণা বাজাচ্ছিলেন। তিনি তখনই মন্দির ছেড়ে এসে আমার গলা জড়িয়ে ধরলেন— বললেন, এসে বাবা, আমার ঘরে এসো। সেইদিন থেকে ছেলের মতো তিনি আমাকে কাছে রেখে মানুষ করেছেন- লোকে তাকে কত কথা বলেছে তিনি কান দেন নি। আমি তাকে বলেছিলেম, প্ৰভু, আমাকে বীণা বাজাতে শেখান, আমি তা হলে কিছু কিছু উপার্জন করে আপনার হাতে দিতে পারব ; তিনি বললেন, বাবা, এ বিদ্যা পেট ভরাবার নয় ; আমার আর-এক বিদ্যা জানা আছে তাই তোমাকে শিখিয়ে দিচ্ছি। এই বলে আমাকে রঙ দিয়ে চিত্র করে পুঁথি লিখতে শিখিয়েছেন । যখন অত্যন্ত অচল হয়ে উঠত। তখন তিনি মাঝে মাঝে বিদেশে গিয়ে বীণা বাজিয়ে টাকা নিয়ে আসতেন । এখানে তাকে সকলে পাগল বলেই জানত । সন্ন্যাসী । সুরসেনের বীণা শুনতে পেলেম না, কিন্তু বাবা উপনন্দ, তোমার কল্যাণে র্তার আর-এক বীণা শুনে নিলুম, এর সুর কোনোদিন ভুলব না । বাবা, লেখো, লেখো। আমরা ততক্ষণ আমাদের দলবলের খবর নিয়ে আসি গে । [প্ৰস্থান শেখর ও রাজা সোমপালের প্রবেশ শেখর। বিজয়াদিত্যকে তুমি হার মানাতে চাও, তা হলে আগে ঐ অপূর্বানন্দ সন্ন্যাসীকে বর্শ করে । রাজা সোমপাল, তিনিও নিশ্চয় তোমার মনের কথা জানেন । সোমপাল | কোথায় তাকে পাব । শেখর । তিনি এখানেই এসেছেন আমি জানি । কাছাকাছি কোথাও আছেন । সোমপাল । দেখো আমি লোক চিনি । তোমাকে দেখে আমার মনে হচ্ছে তোমার দ্বারা আমার কাজ উদ্ধার হবে । শেখর । তা হতেও পারে, অসম্ভব নয় । বিজয়াদিত্যকে বশ করবার ফন্দি আমি হয়তো তোমার্কে কিছু কিছু বলে দিতে পারব। সোমপাল । দেখো, তোমাকে আমি রাজমন্ত্রী করে দেব । শেখর । আমার যদি মন্ত্রণা চাও তা হলে আমাকে মন্ত্রী কোরো না । মন্ত্রণা দেওয়াই যার কাজ তার মুক্ত কােনো বাজার ভাল লাগে না। বিজয়াতের সভায় যে একজন কৰি আছে, অৰ সোমপাল । আরো ছি ছি, সে-ও আবার কবি হল !! ঐ তো রায়শেখরের কথা বলছ ? শেখর । হা, সেই বটে । সোমপাল। সে আমার বিদূষকেরও যোগ্য নয়। শেখর । একেবারেই নয় । সোমপাল । বিজয়াদিত্য যেমন রাজা তার কবিটিও তেমনি । শেখর । তাই তো অনেকে বলে । তোমার সভায় তাকে সোমপাল। আমার সভায় যতক্ষণ আমি আছি ততক্ষণ কিছুতেই শেখর । নিশ্চয়ই । ততক্ষণ সে সোমপাল। সে-কথা পরে হবে। এখন সন্ন্যাসীকে তুমি খুঁজে বের করো ; দেখা হলেই তাকে আমার রাজসভায় পাঠিয়ে দিয়াে, বিলম্ব কোরো না। আমি বরঞ্চ আমার দূতকে পাঠিয়ে দিচ্ছি। [উভয়ের প্রস্থান