পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ଅସ୍ବାକ୍ଯ (୩୪ \ტა ° . সন্ন্যাসী ও ঠাকুরদাদার প্রবেশ সন্ন্যাসী । উপনন্দ, ঐ যে পরদেশী এসেছে— ওকে দেখে তোমার মনে হয় না কি, তোমার আচার্য সুরসেনেরই ও জুড়ি ? উপনন্দ । আমার মনে হচ্ছিল। আমি যেন তারই বীণা শুনছি। সন্ন্যাসী । তুমি যেমন তীকে পেয়েছিলে তেমনি করেই এই মানুষটিকে পাবে। উপনন্দ । উনি কি আমাকে নেবেন ? সন্ন্যাসী । ওর মুখ দেখেই কি বুঝতে পার নি ? উপনন্দ । পেরেছি। আমার প্রভূই বুঝি ওঁকে আমার কাছে পাঠিয়ে দিয়েছেন। লক্ষেশ্বরের প্রবেশ লক্ষেশ্বর। আ সর্বনাশ ! যেখানটিতে আমি কীেটাে পুঁতে রেখেছিলুম ঠিক সেই জায়গাটিতেই যে উপনন্দ বসে গেছে ! আমি ভেবেছিলেম ছোড়াটা বোকা বুঝি তাই পরের ঋণ শুধতে এসেছে। তা তো নয় দেখছি! পরের ঘাড় ভাঙাই ওর ব্যাবসা | আমার গজমোতির খবর পেয়েছে। একটা সন্ন্যাসীকেও কোথা থেকে জুটিয়ে এনেছে দেখছি। সন্ন্যাসী হাত চেলে জায়গাটা বের করে দেবে। উপনন্দ ! উপনন্দ | কী । লক্ষেশ্বর ) ওঠ ওঠ ঐ জায়গা থেকে । এখানে কী করতে এসেছিস ? উপনন্দ । অমন করে চোখ রাঙাও কেন ? এ কি তোমার জায়গা নাকি ? লক্ষেশ্বর। এটা আমার জায়গা কি না সে খোজে তােমার দরকার কী হে বাপু ! ভারি সেয়ানা দেখছি! তুমি বড়ো ভালোমানুষটি সেজে আমার কাছে এসেছিলে । আমি বলি সত্যিই বুঝি প্রভুর ঋণশোধ করবার জন্যেই ছোড়াটা আমার কাছে এসেছে— কেননা, সেটা রাজার আইনেও আছে— উপনন্দ । আমি তো সেইজন্যেই এখানে পুঁথি লিখতে এসেছি । লক্ষেশ্বর । সেইজন্যেই এসেছ বটে ! আমার বয়স কত আন্দাজ করছ বাপু । আমি কি শিশু । সন্ন্যাসী । কেন বাবা, তুমি কী সন্দেহ করছ ? লক্ষেশ্বর। কী সন্দেহ করছি! তুমি তা কিছু জান না ! বড়ো সাধু! ভণ্ড সন্ন্যাসী কোথাকার ! ঠাকুরদাদা । আরো কী বলিস লখা। আমার ঠাকুরকে অপমান ! কাকে কী বলতে হয় জান না ! [সন্ন্যাসীর পশ্চাতে লক্ষেশ্বরের লুক্কায়ন সন্ন্যাসী । আরে কর কী ঠাকুরদা, কর কী বাবা ! লক্ষেশ্বর তোমাদের চেয়ে ঢের বেশি মানুষ চেনে । যেমনি দেখেছে আমনি ধরা পড়ে গেছে। ভণ্ড সন্ন্যাসী যাকে বলে ! বাবা লক্ষেশ্বর, এত দেশের এত মানুষ ভুলিয়ে এলেম, তোমাকে ভোলাতে পারলেম না । লক্ষেশ্বর | না, ঠিক ঠাওরাতে পারছি নে । হয়তো ভালো করি নি। আবার শাপ দেবে কি কী করবে ! তিনখানা জাহাজ এখনো সমুদ্রে আছে। (পায়ের ধূলা লইয়া) প্ৰণাম হই ঠাকুর ! হঠাৎ চিনতে পারি নি । বিরূপক্ষের মন্দিরে আমাদের ঐ বিকটানন্দ বলে একটা সন্ন্যাসী আছে আমি বলি সেই ভণ্ডটাই বুঝি ! ঠাকুরদা, তুমি এক কাজ করো। সন্ন্যাসী ঠাকুরকে আমার ঘরে নিয়ে যাও, আমি ওঁকে কিছু ভিক্ষে দিয়ে দেব । আমি চললেম বলে। তোমরা এগোও । ঠাকুরদাদা। তোমার বড়ো দয়া ! তোমার ঘরের এক মুঠো চাল নেবার জন্যে ঠাকুর সাত সিন্ধু পেরিয়ে এসেছেন ! সন্ন্যাসী। বল কী ঠাকুরদা ! এক মুঠো চাল যেখানে দুর্লভ সেখান থেকে সেটি নিতে হবে বৈকি! বাবা লক্ষেশ্বর, চলো তোমার ঘরে ।