পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SR 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী বাপ একটু হাসল কেবল, ভাবলে, “মেয়েমানুষ হৃদয়তাপের ভাপে ভরা ফানুস । জীবন একটা কঠিন সাধন- নেই। সে ওদের জ্ঞান ৷” এই বলে ফের চলল পড়া ইংরেজি সেই প্রেমের উপাখ্যান । । দুখের তাপে জ্বলে জ্বলে অবশেষে নিবল মায়ের তাপ ; সংসারেতে এক পড়লেন বাপ । বড়ো ছেলে বাস করে তার স্ত্রীপুত্রদের সাথে বিদেশে পাটনাতে । শ্বশুরবাড়ি আছে । মাদ্রাজে কোন বিন্ধ্যগিরির পার । পড়ল মঞ্জলিকার পরে বাপের সেবা-ভার। রাধুনে ব্ৰাহ্মণের হাতে খেতে করেন। ঘূণা, অন্নপানে হত না তার রুচি । সকালবেলায় ভাতের পালা, সন্ধ্যাবেলায় রুটি কিংবা লুচি ; ভাতের সঙ্গে মাছের ঘটা, ভাজাভুজি হত। পাচটা-ছটা ; পাঠা হত রুটি-লুচির সাথে । মঞ্জলিকা দুবেলা সব আগাগোড়া রাধে আপন হাতে । একাদশী ইত্যাদি তার সকল তিথিতেই রাধার ফর্দ এই ৷ বাপের ঘরটি আপনি মোছে ঝাড়ে, রৌদ্রে দিয়ে গরম পোশাক আপনি তোলে পাড়ে । ডেস্কে বাক্সে কাগজপত্ৰ সাজায় থাকে থাকে, ধোবার বাড়ির ফর্দ টুকে রাখে । গয়লানী আর মুদির হিসাব রাখতে চেষ্টা করে, ঠিক দিতে ভুল হলে তখন বাপের কাছে ধমক খেয়ে মরে । তাই নিয়ে তার কত নালিশ শুনতে হয় । তা ছাড়া তার পান-সাজােটা মনের মতো নয় । মায়ের সঙ্গে তুলনাতে পদে-পদেই ঘটে যে তার ত্রুটি । মোটামুটিআজিকালিকার মেয়েরা কেউ নয়। সেকালের মতো । হয়ে নীরব নত মঞ্জলী সব সহ্য করে, সর্বদাই সে শান্ত, কাজ করে অক্লান্ত ।