পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঋণশোধ SSS সন্ন্যাসী । আমি তো সেই চেষ্টাতেই আছি । তুমি নিশ্চিন্ত থাকে, যতক্ষণ না আমার অভিপ্ৰায় সিদ্ধ হয়। আমি সহজে ছাড়ব না | সোমপাল। প্ৰণাম ! |5 [প্ৰস্থান উপনিন্দের প্রবেশ উপনন্দ । ঠাকুর, আমার মনের ভার তো গেল না । সন্ন্যাসী । কী হল বাবা । উপনন্দ । মনে করেছিলেম লক্ষেশ্বর যখন আমাকে অপমান করেছে তখন ওর কাছে আমি আর ঋণ স্বীকার করব না । তাই পুঁথিপত্র নিয়ে ঘরে ফিরে গিয়েছিলেম। সেখানে আমার প্রভুর বীণাটি নিয়ে তার ধুলো ঝাড়তে গিয়ে তারগুলি বেজে উঠল— অমনি আমার মনটার ভিতর যে কেমন হল স। আমি বলতে পারি নে। সেই বীণার কাছে লুটিয়ে পড়ে বুক ফেটে আমার চােখের জল পড়তে লাগল। মনে হল আমার প্রভুর কাছে আমি অপরাধ করেছি। লক্ষেশ্বরের কাছে আমার প্রভু ঋণী হয়ে ঠেলেন আর আমি নিশ্চিন্ত হয়ে আছি ! ঠাকুর, এ তো আমার কোনোমতেই সহ্য হচ্ছে না । ইচ্ছে করছে আমার প্রভুর জন্যে আজ আমি অসাধ্য কিছু একটা করি। আমি তােমাকে মিথ্যা বলছি নে, তার ঋণ শোধ করতে যদি আজ প্রাণ দিতে পারি তা হলে আমার খুব আনন্দ হবে — মনে হবে আজকের এই সুন্দর শরতের দিন আমার পক্ষে সার্থক হল । সন্ন্যাসী । বাবা, তুমি যা বলছি সত্যই বলছি। p উপনন্দ । ঠাকুর, তুমি তো অনেক দেশ ঘুরেছ, আমার মতো অকৰ্মণ্যকেও হাজার কার্ষপণ দিয়ে কিনতে পারেন এমন মহাত্মা কেউ আছেন ? তা হলেই ঋণটা শোধ হয়ে যায় | এ নগরে যদি চেষ্টা করি তা হলে বালক বলে ছোটো জাত বলে সকলে আমাকে খুব কম দাম দেবে। সন্ন্যাসী । না বাবা, তোমার মূল্য এখানে কেউ বুঝবে না। আমি ভাবছি কী, যিনি তোমার প্রভুকে ততািন্ত আদর করতেন। সেই বিজয়াদিত্য বলে রাজাটার কাছে গেলে কেমন হয় ? উপনন্দ ; তুমি জান না বুঝি % সন্ন্যাসী । তা হবে । নাহয় তাই হল । উপনন্দ । আমার মতো ছেলেকে তিনি কি দাম দিয়ে কিনবেন ? সন্ন্যাসী । বাবা, বিনামূল্যে কেনবার মতো ক্ষমতা তীর যদি থাকে তা হলে বিনামূল্যেই কিনবেন। কিন্তু তোমার ঋণটুকু শোধ করে না দিতে পারলে তীর এত ঋণ জমবে যে তার রাজভাণ্ডার লজ্জিত উপনন্দ । ঠাকুর, এও কি সম্ভব ? স্বাসী। বাবা জগতে কেবল কি এক লক্ষেশ্বরই সম্ভব, তার চেয়ে বড়ো সম্ভাবনা কি আর কিছুই - উপনন্দ । আচ্ছ, যদি সে সম্ভব হয় তো হবে, কিন্তু আমি ততদিন পুঁথিগুলি নকল করে কিছু কিছু শোধ করতে থাকি।-- নইলে আমার মনে বড়ো গ্লানি হচ্ছে। সন্ন্যাসী । ঠিক কথা বলেছ বাবা ! বোঝা মাথায় তুলে নাও, কারও প্রত্যাশায় ফেলে রেখে সময় বইয়ে দিয়ে না । উপনন্দ । তা হলে চললেম ঠাকুর | তোমার কথা শুনে আমি মনে কত যে বল পেয়েছি সে আমি [প্ৰস্থান