পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

NU NR NR রবীন্দ্র-রচনাবলী লক্ষেশ্বরের প্রবেশ লক্ষেপ্তম । ঠাকুর, অনেক ভেবে দেখলেম— পারব না। তোমার চেলা হওয়া আমার কর্ম নয়। যা পেয়েছি তা অনেক দুঃখে পেয়েছি, তোমার এক কথায় সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে শেষকালে হায়-হায় করে মরব ! আমার বেশি আশায় কাজ নেই। সন্ন্যাসী । সে কথাটা বুঝলেই হল। লক্ষেশ্বর । ঠাকুর, এবার একটুখানি উঠতে হচ্ছে। , সন্ন্যাসী । (উঠিয়া) তা হলে তোমার কাছ থেকে ছুটি পাওয়া গৈল । লক্ষেশ্বর । (মাটি ও শুষ্কপত্র সরাইয়া কীেটা বাহির করিয়া) ঠাকুর, এইটুকুর জন্যে আজ সকাল থেকে সমস্ত হিসাব কিতাব ফেলে রেখে এই জায়গািটার চার দিকে ভূতের মতো ঘুরে বেড়িয়েছি। এই-যে গজমোতি, এ আমি তোমাকে আজ প্রথম দেখালেম । আজ পর্যন্ত কেবলই এটাকে লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়িয়েছি ; তোমাকে দেখতে পেরে মনটা তবু একটু হালকা হল । (সন্ন্যাসীর হাতের কাছে অগ্রসর করিয়াই তাড়াতাড়ি ফিরাইয়া লইয়া) না, হল না ! তোমাকে যে এত বিশ্বাস করলেম, তবু এ জিনিস একটিবার তোমার হাতে তুলে দিই। এমন শক্তি আমার নেই। এই-যে আলোতে এটাকে তুলে ধরেছি। আমার বুকের ভিতরে যেন গুরুগুর করছে। আচ্ছা ঠাকুর, বিজয়াদিত্য কেমন লোক বলে। তো। তাকে বিক্রি করতে গেলে সে তো দাম না দিয়ে এটা আমার কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নেবে না ? আমার ঐ এক মুশকিল হয়েছে। আমি এটা বেচতেও পারছি নে, রাখতেও পারছি নে, এর জন্যে আমার রাত্রে ঘুম হয় না। বিজয়াদিত্যকে তুমি বিশ্বাস করা ? সন্ন্যাসী | সব সময়েই কি তাকে বিশ্বাস করা যায় ? লক্ষেশ্বর | সেই তো মুশকিলের কথা। আমি দেখছি, এটা মাটিতেই পোতা থাকবে, হঠাৎ কোনদিন মরে যাব, কেউ সন্ধানও পাবে না। সন্ন্যাসী । রাজাও না, সম্রাটও না, ঐ মাটিই সব ফাকি দিয়ে নেবে। তোমাকেও নেবে, আমাকেও (NCK, } লক্ষেশ্বর | তা নিক গে, কিন্তু আমার কেবলই ভাবনা হয়, আমি মরে গেলে কোথা থেকে কে এসে হঠাৎ হয়তো খুঁড়তে খুঁড়তে ওটা পেয়ে যাবে। যাই হােক ঠাকুর, কিন্তু তোমার মুখে ঐ সোনার পদ্মর কথাটা আমার কাছে বড়ো ভালো লাগে। আমার কেমন মনে হচ্ছে, ওটা তুমি হয়তো খুঁজে বের করতে পারবে । কিন্তু তা হােক গে, আমি তোমার চেলা হতে পারব না । প্ৰণাম । 13፧?• ঠাকুরদাদা ও শেখরের প্রবেশ সন্ন্যাসী । ওহে পরদেশী, তুমি তো মানুষের ভিতরকার মতলব সব দেখতে পাও ৷ তুমি জান আমি বেরিয়েছিলুম। বিশ্বের ঋণশোধ করতে | ঠাকুরদাদা। কী ঋণ প্ৰভু, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন না ? সন্ন্যাসী । আনন্দের ঋণ ঠাকুরদা। শরতে যে সোনার আলোয় সুধা ঢেলে দিয়েছে- তার শোধ করতে চাই যদি তো হৃদয় ঢেলে দিতে হবে । ওহে উদাসী, তুমি বল কী ? শেখর । 이R দেওয়া নেওয়া ফিরিয়ে দেওয়া তোমায় আমায় জনম জনম এই চলেছে। মরণ কভু তারে থামায় ? যখন তোমার গানে আমি জাগি আকাশে চাই তোমার লাগি,