পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঋণশোধ \9Հ (; তৃতীয় বালক । সে কী খেলা ঠাকুর ? চতুৰ্থ বালক । সে কেমন করে খেলতে হয় ? সন্ন্যাসী। এই পরদেশীকে তােমাদের সহায় করো, এ মানুষটি সকল খেলাই খেলতে জানে। প্রথম বালক । সে বেশ মজা হবে । দ্বিতীয় বালক ৷ পরদেশী, তুমি বলে দাও আমাদের কী করতে হবে। শেখর । আচ্ছা, তা হলে চলো তোমাদের সাজিয়ে নিয়ে আসি গে । [ বালকগণকে লইয়া কবির প্রস্থান দ্বিতীয় বালক । সে বেশ মজা হবে । একদল লোকের প্রবেশ প্রথম ব্যক্তি । ওরে সন্ন্যাসী কোথায় গেল রে । দ্বিতীয় ব্যক্তি । কই বাবা, সন্ন্যাসী কই । ঠাকুরদাদা । এই যে আমাদের সন্ন্যাসী । ) প্রথম ব্যক্তি ৷৷ ও যেন খেলার সন্ন্যাসী | সত্যিকার সন্ন্যাসী কোথায় গেলেন । সন্ন্যাসী | সত্যিকার সন্ন্যাসী কি সহজে মেলে। আমি একদল ছেলেকে নিয়ে সন্ন্যাসী সন্ন্যাসী খেলেছি । প্রথম ব্যক্তি ৷৷ ও তোমার কী রকম খেলা গা ! দ্বিতীয় ব্যক্তি । ওতে যে অপরাধ হবে । তৃতীয় ব্যক্তি | ফেলো, ফেলো, তোমার জটা ফেলো ! চতুর্থ ব্যক্তি । ওরে দেখ-না গেরুয়া পরেছে! কিন্তু এটা দামি জিনিস রে । প্রথম ব্যক্তি । বাবা, তোমার এই শখের সন্ন্যাসীর সাজ কেন । সন্ন। সী। আমি যে কবির কাছে দীক্ষা নিয়েছিলুম। দ্বিতীয় ব্যক্তি। কবির কাছে ? এ যে শুনি নতুন কথা। আমাদের গায়ে আছে ভুষণ কবি, কৈবত্তর পো, লেখে ভালো, কিন্তু দীক্ষা দিতে এলে তার ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতুম-না ! প্রথম ব্যক্তি। তবে যে আমাদের কে একজন বললে কোথাকার কোন একজন স্বামী এসেছে। সন্ন্যাসী । যদি-বা এসে থাকে তাকে দিয়ে তোমাদের কোনো কাজ হবে না । দ্বিতীয় ব্যক্তি | কেন ? সে ভণ্ড না কি ? সন্ন্যাসী । তা নয় তো কী ? তৃতীয় ব্যক্তি। বাবা, তোমার চেহারাটি কিন্তু ভালো । তুমি মন্ত্রতন্ত্র কিছু শিখেছি ? সন্ন্যাসী । শেখাবার ইচ্ছা তো আছে কিন্তু শেখায় কে ? তৃতীয় ব্যক্তি। একটি লোক আছে বাবা— সে থাকে। ভৈরবপুরে, লোকটা বেতালসিদ্ধ। একটি লোকের ছেলে মারা যাচ্ছিল, তার বাপ এসে ধরে পড়তেই লোকটা করলে কী, সেই ছেলেটার প্রাণপুরুষকে একটা নেকড়ে বাঘের মধ্যে চালান করে দিলে । বললে বিশ্বাস করবে না, ছেলেটা মোলো বটে কিন্তু নেকড়েটা আজও দিব্যি বেঁচে আছে। না, হাসছ কী, আমার সম্বন্ধী স্বচক্ষে দেখে এসেছে। সেই নেকড়েটাকে মারতে গেলে বাপ লাঠি হাতে ছুটে আসে। তাকে দুবেলা ছাগল খাইয়ে লোকটা ফতুর হয়ে গেল। বিদ্যে যদি শিখতে চাও তো সেই সন্ন্যাসীর কাছে যাও । প্রথম ব্যক্তি । ওরে, চল রে, বেলা হয়ে গেল। সন্ন্যাসী ফন্ন্যাসী সব মিথ্যে। সে-কথা আমি তাে তখনই বলেছিলেম । আজকালকার দিনে কি আর সে-রকম যোগবল আছে । দ্বিতীয় ব্যক্তি । সে তো সত্যি। কিন্তু আমাকে যে কালুর মা বললে তার ভাগনে নিজের চক্ষে দেখে এসেছে সন্ন্যাসী একটান গাঁজা টেনে কলকেটা যেমনি উপুড় করলে অমনি তার মধ্যে থেকে এক ভগড় মদ আর একটা আস্ত মড়ার মাথার খুলি বেরিয়ে পড়ল ।