পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তধারা উত্তরকুট পার্বত্য প্রদেশ। সেখানকার উত্তরভৈরব-মন্দিরে যাইবার পথ। দূরে আকাশে একটা অভ্ৰভেদী লৌহ যন্ত্রের মাথাটা দেখা যাইতেছে এবং তাঁহার অপরদিকে ভৈরবমন্দির চূড়ার ত্রিশূল। পথের পার্থে আমবাগানে রাজা রণজিতের শিবির। আজ অমাবস্যায় ভৈরবের মন্দিরে আরতি, সেখানে রাজা পদব্ৰজে যাইবেন, পথে শিবিরে বিশ্রাম করিতেছেন। তাহার সভার যন্ত্ররাজ বিভূতি বহু বৎসরের চেষ্টায় লীেহযন্ত্রের বাধ তুলিয়া মুক্তধারা ঝরনাকে বধিয়াছেন। এই অসামান্য কীর্তিকে পুরস্কৃত করিবার উপলক্ষে উত্তরকুটের সমস্ত লোক ভৈরবমন্দির-প্রাঙ্গণে উৎসব করিতে চলিয়াছে। ভৈরব-মন্ত্রে দীক্ষিত সন্ন্যাসীদল সমস্ত দিন স্তবগান করিয়া বেড়াইতেছে। তাঁহাদের কাহারও হাতে ধূপাধারে ধূপ জ্বলিতেছে, কাহারও হাতে শঙ্খ, কাহারও ঘণ্টা। গানের মাঝে মাঝে তালে তালে ঘণ্টা বাজিতেছে। 5R জয় ভৈরব, জয় শংকর, শংকর শংকর । জয় সংশয়ভেদন, জয় বন্ধন ছেদন, জয় সংকটসংহর শংকর শংকর | [সন্ন্যাসীদল গাহিতে গাহিতে প্রস্থান করিল পূজার নৈবেদ্য লইয়া একজন বিদেশী পথিকের প্রবেশ উত্তরকৃটের নাগরিককে সে প্রশ্ন করিল পথিক । আকাশে ওটা কী গড়ে তুলেছে ? দেখতে ভয় লাগে। নাগরিক। জান না ? বিদেশী বুঝি ? ওটা যন্ত্র। পথিক । কিসের যন্ত্র ? নাগরিক। আমাদের যন্ত্ররাজ বিভূতি পঁচিশ বছর ধরে যেটা তৈরি করছিল, সেটা ঐ তো শেষ হয়েছে, তাই আজ উৎসব । পথিক । যন্ত্রের কাজটা কী ? নাগরিক। মুক্তধারা ঝরনাকে বেঁধেছে। পথিক । বাবা রে! ওটাকে অসুরের মাথার মতো দেখাচ্ছে, মাংস নেই, চোয়াল ঝোলা । তোমাদের উত্তরকুটের শিয়রের কাছে অমন হী করে দাড়িয়ে ; দিনরাত্তির দেখতে দেখতে তোমাদের প্রাণপুরুষ যে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে। নাগরিক। আমাদের প্রাণপুরুষ মজবুত আছে, ভাবনা কোরো না। পথিক । তা হতে পারে, কিন্তু ওটা আমনতরো সূৰ্যতারার সামনে মেলে রাখবার জিনিস নয়, ঢাকা দিতে পারলেই ভালো হত। দেখতে পাচ্ছি না যেন দিনরাত্তির সমস্ত আকাশকে রাগিয়ে দিচ্ছে ?