পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\SD\S)WV রবীন্দ্র-রচনাবলী নাগরিক । আজ ভৈরবের আরতি দেখতে যাবে না ? পথিক । দেখব বলেই বেরিয়েছিলুম। প্রতিবৎসরই তো এই সময় আসি, কিন্তু মন্দিরের উপরের আকাশে কখনো এমনতরো বাধা দেখি নি । হঠাৎ ঐটের দিকে তাকিয়ে আজ আমার গা শিউরে উঠল— ও যে আমন করে মন্দিরের মাথা ছাড়িয়ে গেল এটা যেন স্পর্ধার মতো দেখাচ্ছে । দিয়ে আসি নৈবেদ্য, কিন্তু মন প্ৰসন্ন হচ্ছে না । [প্ৰস্থান একজন স্ত্রীলোকের প্রবেশ একখানি শুভ্ৰ চাদর তাহার মাথা ঘিরিয়া সর্বাঙ্গ ঢাকিয়া মাটিতে লুটাইয়া পড়িতেছে স্ত্রীলোক । সুমন ! আমার সুমন ! (নাগরিকের প্রতি) বাবা, আমার সুমন এখনো ফিরল না। তোমরা তাে সবাই ফিরেছ। নাগরিক। কে তুমি ? স্ত্রীলোক । আমি জনাই গায়ের অম্বা । সে যে আমার চোখের আলো, আমার প্রাণের নিশ্বাস, আমার সুমন । নাগরিক। তার কী হয়েছে বাছা ? অম্বা | তাকে যে কোথায় নিয়ে গেল। আমি ভৈরবের মন্দিরে পুজো দিতে গিয়েছিলুম।— ফিরে এসে দেখি তাকে নিয়ে গেছে | পথিক । তা হলে মুক্তধারার বাধ বাঁধতে তাকে নিয়ে গিয়েছিল। অম্বা | আমি শুনেছি। এই পথ দিয়ে তাকে নিয়ে গেল, ঐ গৌরীশিখরের পশ্চিমে- সেখানে আমার দৃষ্টি পৌঁছয় না, তার পরে আর পথ দেখতে পাই নে । পথিক | কেঁদে কী হবে ? আমরা চলেছি। ভৈরবের মন্দিরে আরতি দেখতে । আজ আমাদের বড়ো দিন, তুমিও চলো । অম্বা। না বাবা, সেদিনও তো ভৈরবের আরতিতে গিয়েছিলুম। তখন থেকে পুজো দিতে যেতে আমার ভয় হয় । দেখো, আমি বলি তোমাকে, আমাদের পুজো বাবার কাছে পীেচচ্ছে না- পথের থেকে কেড়ে নিচ্ছে । নাগরিক | কে নিচ্ছে ? অম্বা । যে আমার বুকের থেকে সুমনকে নিয়ে গেল সে। সে যে কে এখনাে তো বুঝলুম না ; সুমন, আমার সুমন, বাবা সুমন ! { উভয়ের প্রস্থান উত্তরকুটের যুবরাজ অভিজিৎ যন্ত্ররাজ বিভূতিব নিকট দূত পঠাইয়াছেন ; বিভূতি যখন মন্দিরের দিকে চলিয়াছে তখন দূতের সহিত তাহার সাক্ষাৎ দূত। যন্ত্ররাজ বিভূতি, যুবরাজ আমাকে পাঠিয়ে দিলেন । বিভূতি। কী তার আদেশ ? দূত। এতকাল ধরে তুমি আমাদের মুক্তধারার ঝরনাকে বাধা দিয়ে বাধতে লেগেছি। বারবার ভেঙে গেল, কত লোক ধুলোবালি চাপা পড়ল, কত লোক বন্যায় ভেসে গেল। আজ শেষে— বিভূতি। তাদের প্রাণ দেওয়া ব্যর্থ হয় নি। আমার বাধ সম্পূর্ণ হয়েছে। দূত। শিবতরাইয়ের প্রজারা এখনো এ খবর জানে না। তারা বিশ্বাস করতেই পারে না যে, দেবতা তাদের যে জল দিয়েছেন কোনো মানুষ তা বন্ধ করতে পারে। বিভূতি। দেবতা তাদের কেবল জলই দিয়েছেন, আমাকে দিয়েছেন জলকে বীধবার শক্তি । দূত। তারা নিশ্চিন্ত আছে, জানে না। আর সপ্তাহ পরেই তাদের চাষের খেত— বিভূতি । চাষের খেতের কথা কী বলছ ?