পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মুক্তধারা ᏔᏬᏔ Ꮔ । সেই খেত শুকিয়ে মারাই কি তোমার বাধ বাধার উদ্দেশ্য ছিল না ? | বালি-পাথর-জলের ষড়যন্ত্র ভেদ করে মানুষের বুদ্ধি হবে জয়ী এই ছিল উদ্দেশ্য। কোন | ভুট্টার খেত মারা যাবে সে কথা ভাববার সময় ছিল না। যুবরাজ জিজ্ঞাসা করছেন এখনো কি ভাববার সময় হয় নি ? তি। না, আমি যন্ত্রশক্তির মহিমার কথা ভাবছি। দৃত। ক্ষুধিতের কান্না তােমার সে ভাবনা ভাঙতে পারবে না ? বিভূতি। না। জলের বেগে আমার বাঁধ ভাঙে না, কান্নার জোরে আমার যন্ত্র টলে না। দৃত। অভিশাপের ভয় নেই তােমার ? বিভূতি । অভিশাপ ! দেখো, উত্তরকুটে যখন মজুর পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন রাজার আদেশে চণ্ডপত্তনের প্রত্যেক ঘর থেকে আঠারো বছরের উপর বয়সের ছেলেকে আমরা আনিয়ে নিয়েছি । তারা তো অনেকেই ফেরে নি। সেখানকার কত মায়ের অভিশাপের উপর আমার যন্ত্র জয়ী হয়েছে। দৈবশক্তির সঙ্গে যার লড়াই, মানুষের অভিশাপকে সে গ্রাহ্য করে ? দূত। যুবরাজ বলছেন কীর্তি গড়ে তোেলবার গীেরব তো লাভ হয়েছেই, এখন কীর্তি নিজে ভাঙবার যে আরো বড়ো গৌরব তাই লাভ করো। বিভূতি । কীর্তি যখন গড়া শেষ হয় নি তখন সে আমার ছিল ; এখন সে উত্তরকুটের সকলের। ভাঙবার অধিকার আর আমার নেই | দূত। যুবরাজ বলছেন ভাঙবার অধিকার তিনিই গ্রহণ করবেন। বিভূতি। স্বয়ং উত্তরকুটের যুবরাজ এমন কথা বলেন ? তিনি কি আমাদেরই নন ? তিনি কি শিবতরাইয়ের ? দৃত । তিনি বলেন— উত্তরকুটে কেবল যন্ত্রের রাজত্ব নয়, সেখানে দেবতাও আছেন, এই কথা প্রমাণ করা চাই । বিভূতি। যন্ত্রের জোরে দেবতার পদ নিজেই নেব এই কথা প্রমাণ করবার ভার আমার উপর। প্লাজকে বোলো আমার এই বঁধ্যযন্ত্রের মুঠো একটুও আলগা করতে পারা যায় এমন পথ খোলা রাখি দৃত। ভাঙনের যিনি দেবতা তিনি সব সময় বড়ো পথ দিয়ে চলাচল করেন না । তীর জন্যে যে-সব ছিদ্রপথ থাকে সে কারও চোখে পড়ে না । বিভূতি । (চমকিয়া) ছিদ্র ? সে আবার কী ? ছিদ্রের কথা তুমি কী জান ? দৃত । আমি কি জানি ? যার জািনবার দরকার তিনি জেনে নেবেন । [দূতের প্রস্থান উত্তরকুটের নাগরিকগণ উৎসব করিতে মন্দিরে চলিয়াছে। বিভূতিকে দেখিয়া ১ । বাঃ যন্ত্ররাজ, তুমি তো বেশ লোক ! কখন ফাকি দিয়ে আগে চলে এসেছি টেরও পাই নি । ২। সে তো ওর চিরকালের অভ্যোস। ও কখন ভিতরে ভিতরে এগিয়ে সবাইকে ছাড়িয়ে চলে যায় বোঝাই যায় না। সেই তো আমাদের চবুয়্যাগায়ের নেড়া বিভূতি, আমাদের একসঙ্গেই কৈলেস-গুরুর কানমলা খেলে, আর কখন সে আমাদের সবাইকে ছাড়িয়ে এসে এতবড়ো কাণ্ডটা করে বসল। ৩ । ওরে গবরু, বুড়িটা নিয়ে ই করে দাড়িয়ে রইলি কেন ? বিভূতিকে আর কখনো চক্ষে দেখিস নি কি ? মালাগুলো বের কর, পরিয়ে দিই। বিভূতি। থাক থাক, আর নয়। ৩ । আর নয় তো কী ? যেমন তুমি হঠাৎ মস্ত হয়ে উঠেছ তেমনি তোমার গলাটা যদি উটের মতো হঠাৎ লম্বা হয়ে উঠত। আর উত্তরকুটের সব মানুষে মিলে তার উপর তোমার গলায় মালার বােঝা চাপিয়ে দিত তা হলেই ঠিক মানাত ।