পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○br8 রবীন্দ্র-রচনাবলী সম্ভব হতে পারে । রাগ করছি শুনে ?” “রাগ করব কেন ? মেয়েরা নিঃশব্দ নৈপুণ্যে প্রশ্ৰয় ঘটিয়েছে আর তার দায় মানতে হয়েছে পুরুষকে, আমার অভিজ্ঞতায় এমন ঘটনার অভাব নেই । সময় হয়েছে সত্যের অনুরোধে ন্যায়বিচার করবার | আমি সেটা করে থাকি বলেই মেয়েরা আমাকে দেখতে পারে না । যার সঙ্গে উমার বিয়ের হুকুম সেই ভোগীলালের মত কী ?” “সেই নিষ্কণ্টক ভালোমানুষের মতামত বলে কোনো উপসর্গ নেই। বাঙালির মেয়েমাত্রকেই সে বিধাতার অপূর্ব সৃষ্টি বলে জানে। ওরকম মুগ্ধ স্বভাবের ছেলেকে দলের বাইরের আঙিনায় সরিয়ে ফেলা দরকার। জঞ্জাল ফেলার সাব-চেয়ে ভালো বুড়ি বিবাহ ।” “এই সমস্ত উৎপাতের আশঙ্কা সত্ত্বেও আপনি মেয়ে-পুরুষকে একত্র করেছেন কেন ?” “শরীরটাতে ছাই দিয়েছে যে সন্ন্যাসী, আর প্রবৃত্তিকে ছাই করেছে যে-ভস্মকুণ্ড সেই ক্লাবদের নিয়ে কাজ হবে না বলে । যখন দেখব। আমাদের দলের কোনো অগ্নি-উপাসক অসাবধানে নিজের মধ্যেই অগ্নিকাণ্ড করতে বসেছে-- দেব তাদের সরিয়ে । আমাদের অগ্নিকাণ্ড দেশ জুড়ে, নেবানো মন দিয়ে: তা হবে না, আর হবে না। তাদের দিয়ে আগুন যারা চাপতে জানে না ।” গভীর মুখে এলা বসে রইল। কিছুক্ষণ বাদে চোখ নামিয়ে বললে, “আমাকে আপনি তবে ছেড়ে দিন ।” "এতখানি ক্ষতি করতে বল কেন ?” “আপনি জানেন না ।” “জানি নে কে বললে ? দেখা গেল একদিন তোমার খন্দরে একটুখানি রঙ লেগেছে । জানা গোল গোল শুক্রবারে যখন এলুম তোমার ঘরে, তুমি ভেবেছিলে আর-কেউ বা 1 দেখলুম মনটা ঠিক করে নিতে কিছু সময় লাগল। লজ্জা কোরো না তুমি, এতে অসংগত কিছুই নেই।” কণমূল লাল করে চুপ করে রইল এলা। ইন্দ্রনাথ বললে, “তুমি একজনকে ভালোবেসেছ, এই তো ? তোমার মন তো জড় পাষাণে গড়া নয় । যাকে ভালোবাস তাকেও জানি । অনুশোচনার কারণ কিছুই দেখছি নে ৷” “আপনি বলেছিলেন একমন হয়ে কাজ করতে হবে । সকল অবস্থায় তা সম্ভব না হতে পারে ।” ”সকলের পক্ষে নয় । কিন্তু ভালোবাসার গুরুভারে তোমার ব্ৰত ডোবাতে পারে তুমি তেমন মেয়ে NS “কিন্তু-” । “এর মধ্যে কিন্তু কিছুই নেই— তুমি কিছুতেই নিস্কৃতি পাবে না।” “আমি তো আপনাদের কোনো কাজে লাগি নে, সে আপনি জানেন ।” “তোমার কাছ থেকে কাজ চাই নে, কাজের কথা সব জানাইও নে তোমাকে । কেমন করে তুমি নিজে বুঝবে তোমার হাতের রক্তচন্দনের ফোটা ছেলেদের মনে কী আগুন জ্বালিয়ে দেয় । সেটুকু বাদ দিয়ে কেবল শুখো মাইনেয় কাজ করাতে গেলে পুরো কাজ পাব না । আমরা কামিনীকাঞ্চন ত্যাগী নই । যেখানে কাঞ্চনের প্রভাব সেখানে কাঞ্চনকে অবজ্ঞা করি নে, যেখানে কামিনীর প্রভাব সেখানে কামিনীকে বেদীতে বসিয়েছি।” “আপনার কাছে মিথ্যে বলব না, বুঝতে পারছি আমার ভালোবাসা দিনে দিনেই আমার অন্য সকল ভালোবাসাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।” “কোনো ভয় নেই, খুব ভালোবাসো । শুধু মা মা স্বরে দেশকে যারা ডাকাডাকি করে, তারা চিরশিশু । দেশ বৃদ্ধ শিশুদের মা নয়, দেশ অর্ধনারীশ্বর-— মেয়ে-পুরুষের মিলনে তার উপলব্ধি । এই মিলনকে নিস্তেজ কোরো না সংসার-পাঁজরোয় বেঁধে ।” “কিন্তু তবে আপনি যে ঐ উমা-"