পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

08 রবীন্দ্র-রচনাবলী ঘটতে পারে সে-কথা কোনোদিন ভাবতে পারি নি । এর আগে কখনো মন বিচলিত হয় নি বললে মিথ্যে বলা হবে । কিন্তু চঞ্চলত জয় করে খুশি হয়েছি নিজের শক্তির গর্বে। জয় করবার সেই গৰ আজ নেই, ইচ্ছে হারিয়েছি— বাহিরের কথা ছেড়ে দাও, অন্তরের দিকে তাকিয়ে দেখো, হেরেছি। আমি । তুমি বীর, আমি তোমার বন্দিনী ।” “আমিও হেরেছি। আমার সেই বন্দিনীর কাছে । হার শেষ হয় নি, প্রতি মুহুর্তের যুদ্ধে প্রতি মুহুর্তেই হারছি ।” “অস্তু, ফাস্ট ক্লাস ডেক-এ যখন অপূর্ব আবির্ভাবের মতো আমাকে দূর থেকে দেখা দিয়েছিলে তখনো জানতুম থার্ড ক্লাসের টিকিটাটা আমাদের আধুনিক আভিজাত্যের একটা উজ্জ্বল নিদর্শন। অবশেষে তুমি চড়লে রেলগাড়িতে সেকেন্ড ক্লাসে । আমার দেহমনকে প্রবল টান দিলে সেই ক্লাসের দিকে । এমন-কি, মনে একটা চাতুরীর কল্পনা এসেছিল, ভেবেছিলুম, ট্রেন ছাড়বার শেষমূহুর্তে উঠে পড়ব তোমার গাড়িতে, বলব, তাড়াতাড়িতে ভুলে উঠেছি। কাব্যশাস্ত্রে মেয়েরাই অভিসার করে এসেছে, সংসারবিধিতে বাধা আছে বলেই কবিদের এই করুণা । উসখুসি-করা মনের যত সব এলোমেলো ইচ্ছে ভিতরের আঁধার কোঠায় ঘুর খেয়ে খেয়ে দেয়ালে মাথা ঠুকে ঠুকে বেড়ায় । এদের কথা মেয়েরা পর্দার বাইরে কিছুতে স্বীকার করতে চায় না । তুমি আমাকে স্বীকার করিয়েছ ।" “কোন স্বীকার করলে ?” । “নারীজাতির গুমর ভেঙে কেবল ঐ স্বীকারটুকুই তোমাকে দিতে পেরেছি, আর তো কিছু পারি son " হঠাৎ অতীন এলার হাত চেপে ধরে বলে উঠল, “কোন পারলে না ? কিসের বাধা ছিল আমাকে গ্রহণ করতে ? সমাজ ?? জাতিভেদ ?” “ছি, ছি, এমন কথা মনেও কোরো না | বাইরে বাধা নয়, বাধা অন্তরে ।” “যথেষ্ট ভালোবাস নি ?” - “ঐ যথেষ্ট কথাটাব কোনো মানে নেই অস্তু । যে শক্তি হাত দিয়ে পর্বতকে ঠেলতে পারে নি তাকে দুর্বল বলে অপবাদ দিয়ে না । শপথ করে সত্য গ্রহণ করেছিলুম, বিয়ে করব না । না করলেও হয়তে বিয়ে সম্ভব হত না ।” "tन् । • ?" “রাগ কোরো না অন্তু, ভালোবাসি বলেই সংকোচ । আমি নিঃস্ব, কতটুকুই বা তোমাকে দিতে পারি ।” “স্পষ্ট করেই বলে ।” “অনেকবার বলেছি। ” “আবার বলো, আজ সব বলা-কওয়া শেষ করে নিতে চাই, এর পরে আর জিজ্ঞাসা করব না ।" বাইরে থেকে ডাক এল, “দিদিমণি ।” “কী রে অখিলা, আয়- না ভিতরে ।” ছেলেটার বয়স ষোলো কিংবা আঠারো হবে | জেদ্দালো দুষ্টুমি-ভরা প্রিয়দর্শন চেহারা ; কেঁকড়া চুল ঝাঁকড়ামাকড়া, কচি শামলা রঙ, চঞ্চল চোখদুটাে জ্বলজ্বল করছে । খাকি রঙের শর্টপরা, কোমর পর্যন্ত ছাটা সেই রঙেরই একটা বোতাম-খোলা জামা, বুক বের করা ; শটের দুই দিককার পকেট নানা বাজে সম্পত্তিতে ফুলে-ওঠা, বুকের পকেটে বিচিত্র ফলাওয়ালা একটা হরিণের শিঙের ছুরি ; কখনো বা সে খেলার নীেকো, কখনো এরোপ্লেনের নমুনা বানায় । সম্প্রতি মল্লিক কোম্পানির আয়ুর্বৈদিক বাগানে দেখে এসেছে জলতোলা হাওয়া-যন্ত্র ; বিস্কুটের টিন প্রভৃতি নানা ফালতো জিনিস জোড়াতাড়ি দিয়ে তারই নকলের চেষ্টা চলছে। আঙুল কেটেছে, তার উপরে ন্যাকড়া জড়ানো, এল জিজ্ঞাসা করলে কানেই আনে না। এলা। এই বাপ-ম-মরা ছেলের দূরসম্পর্কের আত্মীয়, অনেক উৎপাত সহা করে । কার কাছ থেকে বেঁটে জাতের এক বান্দর অখিল সস্তা দামে কিনেছে ; জন্তুটা ভাড়ারে