পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চার অধ্যায় \SG বৃত্তিতে সুদক্ষ। এলার ছােটাে পরিবারে এই জন্তুটা একটা মস্ত অত্যাচার। ঘরে ঢুকেই অখিল সলজ্জ দ্রুতবেগে পা ছুঁয়ে এলাকে প্ৰণাম করলে। এলা বুঝলে প্ৰণামটা একটা কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানের অন্তর্গত, কেননা ভক্তিবৃত্তিটা অখিলের স্বভাবসিদ্ধ নয়। এলা বললে, “তোর অস্তুদাদাকে প্ৰণাম করবি নে ?” কোনো জবাব না দিয়ে অখিল অতীনের দিকে পিঠ ফিরিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে রইল। অতীন উচ্চস্বরে হেসে উঠল। অখিলের পিঠ চাপড়িয়ে বললে, “শাবাশ, মাথা যদি হেঁট করতেই হয় তো এক-দেবতার পায়ে। সেই একেশ্বরীর কাছে আমারও মাথা ইট, এখন প্ৰসাদের ভাগ নিয়ে রাগারগি কোরো না এলা অখিলকে বললে, “তোর কী কথা আছে বলে যা৷ ” “তই তো । একেবারে ভুলে গিয়েছিলুম। কাউকে শ্রাদ্ধের নিমন্ত্রণ করতে চাস ?” “কাউকে না ।” “তবে কী চাস ?” । “পড়ার ছুটি চাই তিন দিন ।” “খরগোশের খাচা বানাব ।” “খরগোশ তোর একটিও বাকি নেই, খাচা বানাবি কার জন্যে ?” অতীন হেসে বললে, “খরগোশ তো কল্পনা করলেই হয়, খাচাটা বানানােই, আসল কথা । মানুষ ভগবান মনু থেকে আরম্ভ করে মনুর আধুনিক অবতার পর্যন্ত । এই কাজে তাদের ভীষণ শখ।” “আচ্ছা অখিল, যা তোর ছুটি ৷” দ্বিতীয় কথাটি না বলে অখিল দৌড়ে চলে গেল । অতীন বললে, “ওকে পোষ মানাতে পারলুম না । আমার সাবেক সম্পত্তির ঝড়তিপড়তির মধ্যে ছিল একটা কবজিঘড়ি, আধুনিক ছেলেদের পক্ষে সাত রাজার ধন। একদিন সেটা ওকে দিতে গিয়েছিলুম ; মাথা ঝাকানি দিয়ে চলে গেল। এর থেকে বুঝবে ওতে আমাতে ব্যাপারটা কমু্যুনাল হয়ে উঠেছে, অন্তু-অখিল রায়ট হবার লক্ষণ ।” কেন ?” "মাঝখানে আছে। তৃতীয় পক্ষ, নইলে ওতে আমাতে হরিহর বনে যৌতুম ; থাক সে-কথা ; এখন বলো, তোমার কৈফিয়াতটা কী ? কেন আমাকে সরিয়ে রাখলে ?” "একটা সোজা কথা কেন তুমি মনে রাখ না যে, তোমার চেয়ে আমি বয়সে বড়ো ?” "কারণ এই সোজা কথাটা ভুলতে পারিনি যে, তোমার বয়স আটাশ, আমার বয়স আটাশ পেরিয়ে কয়েক মাস। প্রমাণ করা খুব সহজ, কারণ দলিলটা তাম্রশাসনে ব্ৰাহ্মীলিপিতে লেখা নয়।” “আমার আটাশ তোমার আটাশকে বহুদূরে পেরিয়ে গেছে। তোমার আটাশে যৌবনের সব সলতেই নিধুম জ্বলছে। এখনো তোমার জানলা খোলা যাদের দিকে, তারা অনাগত তারা অভাবিত।” "এলী, আমার কথাটা কিছুতে বুঝতে চাচ্ছি না বলেই বুঝছ না। দলের কাছে ভগবানের সত্যের বিরুদ্ধে সত্য নিয়েছ, তাই নানা তর্ক বানিয়ে নিজেকে ভোেলাচ্ছ, আমাকেও । ভোলাও কিন্তু এ-কথা বোলো না আমার জীবনে এখনো অনাগত অভাবিত দূরে রয়ে গেছে | এসেছে সে, সে তুমি । তবুও আজও সে অনাগত । চিরদিনই কি তবে জানলা খোলা থাকবে তার দিকে ? সেই শূন্যের ভিতর দিয়ে সুন্টু বাজাের আমার আর্ত সুর চাই তােমাকে চাই, আর অন্য দিক দিয়ে ফিরে আসবে না কােনাে উত্তর ?” ۹ |||||||||||||||||||||