পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8૦૨ রবীন্দ্র-রচনাবলী তৃতীয় অধ্যায় গায়ে গায়ে ঠেসাঠেসি ফিকে-সবুজ গাঢ়-সবুজ হলদে-সবুজ ব্রাউন-সবুজ রঙের গুলো বনস্পতি, জড়িত নিবিড়তা, বঁাশপতা-পচা পাকের স্তরে ভরে ওঠা ডোবা ; তারই পাশ দিয়ে আঁকাবাকা । গোরুরগাড়ির চাকায় বিক্ষত । ওল, কচু, ঘেটু, মনসা, মাঝে মাঝে আসশেওড়ার বেড়া | রূচিৎ কিলে, মধ্যে দেখতে পাওয়া যায় আল দিয়ে বাধা কচি ধানের খেতে জল দাড়িয়েছে। গলি শেষ হত্যুে গঙ্গার ঘাটে । সেকালের ছোটাে ছোটাে ইট দিয়ে গাথা ভাঙা ফাটা ঘাট কান্ত হয়ে পড়েছে, তালঃ , পড়ে গঙ্গা গেছে সরে, কিছুদূরে তীরে ঘাট পেরিয়ে জঙ্গলের মধ্যে একটা পুরোনো ভাঙা বৰ্ণ...” অভিশপ্ত ছায়ায় দেড়শ বছর আগেকার মাতৃহত্যাপাতকীর ভূত আশ্রয় নিয়েছে বলে জনপ্রিল ৮ অনেককাল কোনো সজীব স্বত্বাধিকারী সেই অশরীরীর বিরুদ্ধে আপন দাবি স্থাপনের চেষ্টমাত্র কী? নি। দৃশ্যটা এইখানকার পরিত্যক্ত পুরোনো পুজোর দালান, তার সামনে শেওলা-পড়া রািশ এবড়োখেবড়ো প্রশস্ত আঙিনা । কিছুদূরে নদীর ধারে ভেঙে-পড়া দেউল, ভাঙ রাসমঞ্চ, প্ৰ'ট', প্রাচীরের ভগ্নাবশেষ, ডাঙায় তোলা পাজার বের-করা ভাঙা নীেকো ঝুরি।-নামা বটগাছের অন্ধকার ऊळ । এইখানে দিনের শেষ প্রহরে অতীনের বর্তমান বাসস্থানে ছায়াচ্ছন্ন দালানে প্রবেশ করল কানাঃ গুপ্ত | চমকে উঠল। অতীন, কেননা এখানকার ঠিকানা কানাইয়েরও জানিবার কথা ছিল না। “আপনি যে ” “ঠাট্ট নয় । আমি তোমাদের রসদ-জোগানদারদের সামান্য একজন | চায়ের দোকানে শনি প্রবেশ করলে, বেরিয়ে পড়লুম। সঙ্গে সঙ্গে চলল ওদের কুদৃষ্টি । শেষকালে ওদেরই গোয়েন্দার খাতায় নাম লিখিয়ে এলুম। নিমতলা ঘাটের রাস্তা ছাড়া কোনো রাস্তা নেই যাদের সামনে, তাদের পক্ষে এটা গ্রাস্তু ট্রাঙ্ক রোড, দেশের বুকের উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত বরাবর লম্বমান ।” “চা বানানো ছেড়ে খবর বানাচ্ছেন ?” “বানালে এ ব্যাবসা চলে না । বিশুদ্ধ খাটি খবরই দিতে হয় । যে-শিকার জালে পড়েইছে আমি তার ফাস টেনে দিই। তোমাদের হারেনের সাড়ে পনেরো আনা খবর ওদের কাছে পৌঁছোল, শেফ বাহুল্য খবরটা আমি দিয়েছি। সে এখন জলপাইগুড়িতে সরকারি ধর্মশালায় ।” “এবার বুঝি আমার পালা ?” “ঘনিয়ে এসেছে। কাজ অনেকখানি এগিয়ে এনেছে বন্টু। আমার অংশে যেটুকু পড়ল তাতে কিছু সময় পাবে | সাবেক বাসায় থাকতে হঠাৎ তোমার ডায়ারি হারিয়েছিল । মনে আছে ?” “খুব মনে আছে।” స్టో? হাতে নিশ্চিত পড়ত, কাজেই আমাকেই চুরি করতে হল ।” “আপনি ?” “হা, সাধু যার সংকল্প ভগবান তার সহায় । একদিন সেটা লিখছিলে, আমারই কৌশলে সরে গেলে পাচ মিনিটের জন্যে । সেই সময়ে সরিয়েছি।” - অতীন মাথায় হাত দিয়ে বললে, “সবটা পড়েছেন ?” “নিশ্চিত পড়েছি। পড়তে পড়তে রাত হয়ে গেল দেড়টা । বাংলা ভাষায় এত তেজ এত রস ত্যু আগে জানতুম না। ওর মধ্যে গোপনীয় কথা আছে বৈকি। কিন্তু সেটা ব্রিটিশসাম্রাজ্য সম্পর্কে নয় । “কত ভালো করেছি তা বলতে পারি নে। তুমি সাহিত্যিক, তুমি সমস্ত খাতায় খুঁটিনাটি কথা কিছু লেখ নি, কারও নাম পর্যন্ত নেই। কেবল ভাবের দিক থেকে এত ঘৃণা এত অশ্রদ্ধা যে, তা কোনো