পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী উপস্থিত। আমি মুগ্ধ, তবু বুঝতুম এই অতি অমায়িক দিদিয়ানা তোমার অতিপবিত্র ভারতবর্ষের বিশেষ ফরমাশের। একেবারে আদর্শ স্বদেশী দিদিবৃত্তি ।” “আঃ চুপ করো, চুপ করো অস্তু।” “অনেক বাজে জিনিসের বাহুল্য ছিল সেদিন তোমার মধ্যে, অনেক হাস্যকর ভড়ং— সে কথা তোমাকে মানতেই হবে ।” “মানছি, মানছি, একশো বার মানছি। তুমিই সে-সমস্ত নিঃশেষে ঘুচিয়ে দিয়েছ। তবে আজ আবার অমন নিষ্ঠুর করে বলছি কেন ?” “কোন মনস্তাপে বলছি, শোনো। জীবিকা থেকে ভ্ৰষ্ট করেছ বলে সেদিন আমার কাছে মাপ চাইছিলে। যথার্থ জীবনের পথ থেকে ভ্ৰষ্ট হয়েছি অথচ সেই সর্বনাশের পরিবর্তে যা দাবি করতে পারতুম তা মেটে নি। আমি ভেঙেছি আমার স্বভাবকে, কুসংস্কারে অন্ধ তুমি ভাঙতে পারলে না। তোমার পণকে যার মধ্যে সত্য ছিল না ; এজন্যে মাপ চাওয়া কি বাহুল্য ছিল ?? জানি, তুমি ভািবছ 6उी दी कल नgद श्ल |” “হাঁ অন্তু, আমার বিস্ময় কিছুতেই যায় না- জানি নে আমার এমন কী শক্তি ছিল।" “তুমি কী করে জানবে ? তোমাদের শক্তি তোমাদের নিজের নয়, ও মহামায়ার। কী আশ্চর্য সূত্র তোমার কণ্ঠে, আমার মনের অসীম আকাশে ধ্বনির নীহারিকা সৃষ্টি করে। আর তোমার এই হাতখনি, ঐ আঙুলগুলি, সত্যমিথ্যে সব-কিছুর পরে পরশমণি ছুইয়ে দিতে পারে। জানি নে, কী মোহের বেগে, ধিক্কার দিতে দিতেই নিয়েছি। স্মৃলিত জীবনের অসম্মান | ইতিহাসে পড়েছি। এমন বিপত্তির কথা, কিন্তু আমার মতো বুদ্ধি-অভিমানীর মধ্যে এটা যে ঘটতে পারে কখনো তা ভাবতে পারতুম না। এবার জাল ছেড়বার সময় এল, তাই আজ বলব তোমাকে সত্য কথা, যত কঠোর হােক ৷” “বলো, বলো, যা বলতে হয় বলে । দয়া কোরো না। আমাকে । আমি নির্মম, নিজীব, আমি মূঢ়তোমাকে বোঝবার শক্তি আমার কোনোকালে ছিল না। অতুল্য যা তাই এসেছিল হাত বাড়িয়ে আমার কাছে, অযোগ্য আমি, মূল্য দিইনি। বহুভাগের ধন চিরজন্মের মতো চলে গেল। এর চেয়ে শাস্তি যদি शोक, प्रा७ भीठि ।” “থাক, থাক, শাস্তির কথা। ক্ষমাই করব আমি । মৃত্যু যে ক্ষমা করে সেই অসীম ক্ষমা ! সেইজন্যেই আজ এসেছি।” “সেইজন্যে ?” “ই কেবলমাত্র সেইজনে ৷” “না-ই ক্ষমা জানাতে তুমি । কিন্তু কেন এলে এমন করে বেড়া-আগুনের মধ্যে ? জানি, জানি, বঁচবার ইচ্ছে নেই তোমার । তা যদি হয় তা হলে কটা দিন কেবলমাত্র আমাকে দাও, দাও তোমার সেবা করবার শেষ অধিকার । পায়ে পড়ি তোমার ।” “কী হবে সেবা ! ফুটাে জীবনের ঘটে ঢালবে সুধা ! তুমি জান না, কী অসহ্য ক্ষোভ আমার । শুশ্রুষা দিয়ে তার কী করতে পাের, যে-মানুষ আপনি সত্য হারিয়েছে!” “সত্য হারাও নি। অন্তু । সত্য তোমার অন্তরে আছে অক্ষুন্ন হয়ে ।” “বোলো না, বোলো না। অমন কথা ।” “আমি যে কী যদি জানতে পারতে তোমার মাথা থেকে পা পর্যন্ত শিউরে উঠত।” “অন্তু, আত্মনিন্দা বাড়িয়ে তুলছ কল্পনায়। নিষ্কামভাবে যা করেছ তার কলঙ্ক কখনোই লাগবে না তোমার স্বভাবে ।” “স্বভাবকেই হত্যা করেছি, সব হত্যার চেয়ে পাপ । কোনো অহিতকেই সমূলে মারতে পারি নি, সমূলে মেরেছি। কেবল নিজেকে । সেই পাপে, আজ তোমাকে হাতে পেলেও তোমার সঙ্গে মিলতে পারব না। পাণিগ্রহণ ! এই হাত নিয়ে ! কিন্তু কেন এ-সব কথা ! সমস্ত কালো দাগ মুছবে যমকন্যার