পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 \\ রবীন্দ্র-রচনাবলী অতীনবাবু ? চলুন। একসঙ্গে যাওয়া যাক - কোথায় ? না, মেথরদের বসতিতে ; হঠাৎ গিয়ে পড়ে ওদের মদ খাওয়া বন্ধ করতে হবে - সর্বশরীর জ্বলে উঠল। বললুম, মদ তো বন্ধ করবে, তার বদলে দেবে কী - বিষয়টা নিয়ে এতটা উত্তেজিত হবার দরকার ছিল না। ফল হল, যারা চলে যাচ্ছিল তারা দাঁড়িয়ে গেল। শুরু হল- আপনি কি তবে বলতে চান— তীব্ৰস্বরে বলে উঠলুমকিছু বলতে চাই নে — এতটা বেশি ঝােজও বেমানান হল। গলা ভারী করে তোমার দিকে আধখন চোখে চেয়ে বললুম, তবে আজ আসি । দোতলায় তোমার ঘরের সামনে পর্যন্ত এসে পা চলতে চায় না। কী বুদ্ধি হল বুকের পকেট চাপড়িয়ে বললুম, ফাউন্টেন পেনটা বুঝি ফেলে এসেছি। বটু বললে আমিই খুঁজে আনছি— বলেই দ্রুত চলে গেল ছাদে। পিছু পিছু ছুটিলুম আমি । খানিকটা খোঁজবার ভান করে বটু ঈষৎ হেসে বললে, দেখুন তো বোধ করি পকেটেই আছে। নিশ্চিত জানতুম আমার ফাউন্টেন পেনটা আবিষ্কার করতে হলে ভূগোল সন্ধানের প্রয়োজন আমার নিজের বাসাতেই। স্পষ্ট বলতে হল, এলাদির সঙ্গে বিশেষ কথা আছে। বটু বললে, বেশ তো অপেক্ষা করছি। আমি বললুম। অপেক্ষা করতে হবে না, যাও । বটু ঈষৎ হেসে বললে, রাগ করেন কেন অতীনবাবু, আমি চললুম।” আবার পায়ের শব্দ শুনে অতীন চমকে উঠে থামল । অখিল এল ছাদে। বললে, “কে একজন এই চিরকুট দিয়েছে অতীনবাবুকে । তাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেছি।” এলার বুক ধড়াস করে উঠল, বললে, “কে এল ?” “অতীন বললে, “বাবুকে ঢুকতে দাও ঘরে ।” অখিল জোরের সঙ্গে বললে, “না, দেব না।” অতীন বললে, “ভয় নেই, বাবুকে তুমি চেন ; অনেকবার দেখেছ ?” “का ििन (का ।” “খুব চেন। আমি বলছি, ভয় নেই, আমি আছি।” এলা বললে, “অখিল, যা তুই মিথ্যে ভয় করিস নে ৷” অখিল চলে গেল । এলা জিজ্ঞাসা করলে, “বাঁটু এসেছে না কি ?” “না বটু নয়।” “বলো-না, কে এসেছে । আমার ভালো লাগছে না ।” “থাক, সে-কথা, যা বলছিলুম বলতে দাও।” “অন্তু, কিছুতেই মন দিতে পারছি নে ৷” “এলা, শেষ করতে দাও আমার কাহিনী। বেশি দেরি নেই।- তুমি উঠে এলে ছাদে। মৃদুগন্ধ পেলুম রজনীগন্ধাের । ফুলের গুচ্ছটি সবার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিলে একলা আমার হাতে দেবে বলে। আমাদের সম্বন্ধের ক্ষেত্রে অস্তুর জীবনলীলা শুরু হল এই লাজুক ফুলের গোপন অভ্যর্থনায়, তার পর থেকে অতীন্দ্রনাথের বিদ্যাবুদ্ধি গাভীর্যক্রমে ক্রমে তলিয়ে গেল অতলস্পর্শ আত্মবিস্মৃতিতে | সেইদিন প্রথম তুমি আমার গলা জড়িয়ে ধরলে, বললে এই নাও জন্মদিনের উপহার- সেই পেয়েছি প্রথম চুম্বন। আজ দাবি করতে এসেছি। শেষ চুম্বনের।” অখিল এসে বললে, “বাবুট দরজায় ধাক্কা মারতে শুরু করেছে। ভাঙল বুঝি। বলছে, জরুরি क९ों।” “ভয় নেই অখিল, দরজা ভাঙবার আগেই তাকে ঠাণ্ড করব । বাবুকে ঐখানেই অনাথ করে রেখে তুমি এখনই পালাও অন্য ঠিকানায়। আমি আছি এলাদির খবর নিতে।” এলা অখিলকে বুকের কাছে টেনে নিয়ে তার মাথায় চুমো খেয়ে বললে, “সোনা আমার, লক্ষ্মী আমার, ভাই আমার, তুই চলে যা । তোর জন্যে কখনো নোট আমার আঁচলে বেঁধে রেখেছি, তোর এলাদির আশীৰ্বাদ । আমার পা ছুঁয়ে বল, এখনই তুই যাবি, দেরি করবি নে ৷” অতীন বললে, “অখিল, আমার একটি পরামর্শ তোমাকে শুনতেই হবে। যদি তোমাকে কখনো কোনো প্রশ্ন কেউ জিজ্ঞাসা করে তুমি ঠিক কথাই বলবে। বোলো এই রাত এগারোটার সময় আমিই