পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 Sbr রবীন্দ্র-রচনাবলী “কাল বঁটুর চিঠি পেয়েছি, সে খবর দিয়েছে পুলিস আমাকে ধরবে, লিখেছে— সে এখনো আমার by 9. " “কী উপায়ে ?” “বলছে, যদি আমি তাকে বিয়ে করি তা হলে সে আমার জামিন হয়ে আমার দায় গ্রহণ করবে। ” অন্ধকার হয়ে উঠল। অতীনের মুখ, জিজ্ঞাসা করলে, “কী জবাব দিলে তুমি ?” এলা বললে, “আমি সেই চিঠির উপরে কেবল লিখে দিলুম পিশাচ । আর-কিছু নয়।“ “খবর পেয়েছি, সেই বঁটুই আসবে কাল পুলিসকে সঙ্গে নিয়ে। তোমার সম্মতি পেলেই বাঘের সঙ্গে রফা করে তোমাকে কুমিরের গর্তে আশ্রয় দেবার হিতব্ৰতে সে উঠে পড়ে লাগবে। তার হৃদয় কোমল |” এলা অতীনের পা জড়িয়ে ধরে বললে, “মারো আমাকে অস্তু, নিজের হাতে। তার চেয়ে সৌভাগ আমার কিছু হতে পারে না।” মেঝের থেকে উঠে দাঁড়িয়ে অতীনকে বার বার চুমো খেয়ে খে? বললে, “মারো এইবার মারো।” ছিড়ে ফেললে বুকের জামা । অতীন পাথরের মূর্তির মতো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। এলা বললে, “একটুও ভেবো না অস্তু। আমি যে তোমার, সম্পূর্ণই তোমার--- মরণেও তোমার ; নাও আমাকে । নোংরা হাত লাগতে দিয়ে না। আমার গায়ে, আমার এ দেহ তোমার ।” অতীন কঠিন সুরে বললে, “যাও এখনই শুতে যাও, হুকুম করছি শুতে যাও।” অতীনকে বুকে চেপে ধরে এলা বলতে লাগল - “অন্তু, অন্তু আমার, আমার রাজা, আমার দেবতা, তোমাকে কত ভালোবেসেছি আজ পর্যন্ত সম্পূর্ণ করে তা জানাতে পারলুম না। সেই ভালোবাসার দোহাই, মারো, আমাকে মারো ।” অতীন এলার হাত জোর করে ধরে তাকে শোবার ঘরে টেনে নিয়ে গেল, বললে, “শোও, এখনই শোও। ঘুমোও।” “ঘুম হবে না।” “ঘুমোবার ওষুধ আছে আমার হাতে।” “কিছু দরকার নেই অস্তু। আমার চৈতন্যের শেষ মুহূর্ত তুমিই নাও । ক্লোরোফরম এনেছ ? দাও ওটাকে ফেলে। ভীরু নই। আমি ; জেগে থেকে যাতে মারি তোমার কোলে তাই করো। শেষ চুম্বন আজ অফুরান হল অস্তু। অন্তু!” দূরের থেকে হুইন্সলের শব্দ এল।