পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

邻国邻两 8○> দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ রাজকুমার রাজধরের বয়স উনিশ বৎসর। শ্যামবর্ণ বেঁটে, দেহের গঠন বলিষ্ঠ। সেকালে অন্য রাজপুত্রেরা যেমন বড়ো বড়ো চুল রাখিতেন ইহার তেমন ছিল না। ইহার সোজা সোজা মোটা চুল ছোটাে করিয়া ছটা । ছােটাে ছােটাে চােখ, তীক্ষ দৃষ্টি । দাঁতগুলি কিছু বড়ো। গলার আওয়াজ ছেলেবেলা হইতেই কেমন কৰ্কশ। রাজধরের বুদ্ধি অত্যন্ত বেশি এইরূপ সকলের বিশ্বাস, তাহার নিজের বিশ্বাসও তাই। এই বুদ্ধির বলে তিনি আপনার দুই দাদাকে অত্যন্ত হেয়ঞ্জান করিতেন । রাজধরের প্রবল প্রতাপে বাড়িসুদ্ধ সকলে অস্থির। আবশ্যক থাক না থাক একখানা তলোয়ার মাটিতে ?কিয়া ?কিয়া তিনি বাড়িময় কর্তৃত্ব করিয়া বেড়ান। রাজবাটীর চাকরবাকরেরা তীহাকে রাজা বলিয়া মহারাজ বলিয়া হাতজোড় করিয়া সেলাম করিয়া প্ৰণাম করিয়া কিছুতে নিস্তার পায় না। সকল জিনিসেই তাহার হাত, সকল জিনিসই তিনি নিজে দখল করিতে চান। সে-বিষয়ে তাহার চক্ষুলজ্জাটুকু। পর্যন্ত নাই। একবার যুবরাজ চন্দ্রনারায়ণের একটা ঘোড়া তিনি রীতিমত দখল করিয়াছিলেন, দেখিয়া যুবরাজ। ঈষৎ হাসিলেন, কিন্তু কিছু বলিলেন না। আর-একবার কুমার ইন্দ্ৰকুমারের রূপার পাত লাগানো একটা ধনুক আন্নািনবদনে অধিকার করিয়াছিলেন- ইন্দ্ৰকুমার চটিয়া বলিলেন, “দেখো, যে জিনিস লইয়াছ উহা আমি আর ফিরাইয়া লইতে চাহি না, কিন্তু ফের যদি তুমি আমার জিনিসে হাত দাও, তবে আমি এমন করিয়া দিব যে, ও-হাতে আর জিনিস তুলিতে পরিবে না।” কিন্তু রাজধর দাদাদের কথা বড়ো গ্রাহা করিতেন না | লোকে তাহার আচরণ দেখিয়া আড়ালে বলিত, “ছোটােকুমারের রাজার ঘরে জন্ম বটে, কিন্তু রাজার ছেলের মতো কিছুই দেখি না।” কিন্তু মহারাজা অমরমাণিক্য রাজধারকে কিছু বেশি ভালোবাসিতেন। রাজধর তাহা জানিতেন । আজ পিতার কাছে গিয়া ইশা খাঁর নামে নালিশ করিলেন । রাজা ইশা খাকে ডাকাইয়া আনিলেন। বলিলেন, “সেনাপতি, রাজকুমারদের এখন বয়স হইয়াছে। এখন উহাদিগকে যথোচিত সম্মান করা উচিত ।” V “মহারাজ বাল্যকালে যখন আমার কাছে যুদ্ধ শিক্ষা করিতেন তখন মহারাজকে যেরূপ সম্মান করিতাম, রাজকুমারগণকে তাহা অপেক্ষা কম সম্মান করি না।” রাজধর বলিলেন, “আমার অনুরোধ, তুমি আমার নাম ধরিয়া ডাকিয়ে না।” ইশা খা বিদ্যুদবেগে মুখ ফিরাইয়া কহিলেন, "চুপ করো বৎস। আমি তোমার পিতার সহিত কথা কহিতেছি। মহারাজ, মার্জনা করিবেন, আপনার এই কনিষ্ঠ পুত্রটি রাজপরিবারের উপযুক্ত হয় নাই। ইহার হাতে তলোয়ার শোভা পায় না। এ বড়ো হইলে মুনশির মতো কলম চালাইতে পরিবে- আর কোনো কাজে লাগিবে না।” এমন সময়ে চন্দ্রনারায়ণ ও ইন্দ্ৰকুমার সেখানে উপস্থিত হইলেন। ইশা খাঁ তাহাদের দিকে ফিরিয়া বললেন, "চাহিয়া দেখুন মহারাজ, এই তো যুবরাজ বটে। এই তো রাজপুত্র বটে।” রাজা রাজধরের দিকে চাহিয়া বলিলেন, “রাজধর, খা সাহেব কী বলিতেছেন। তুমি অস্ত্রবিদ্যায় উহাকে সন্তুষ্ট করিতে পার নাই ?” রাজধর বলিলেন, “মহারাজ, আমাদের ধনুর্বিদ্যার পরীক্ষা গ্রহণ করুন, পরীক্ষায় যদি আমি সর্বশ্রেষ্ঠ নী হই তবে আমাকে পরিত্যাগ করবেন। আমি রাজবাটী ছাড়িয়া চলিয়া যাইব ।” রাজা বলিলেন, “আচ্ছা, আগামী সপ্তাহে পরীক্ষা হইবে। তােমাদের মধ্যে যিনি উত্তীর্ণ হইবেন,