পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S8 রবীন্দ্র-রচনাবলী ইন্দ্ৰকুমার বলিলেন, “সে হয় না- এ কথা রাখিতে পারি না ।” কমলদেবী বলিলেন, “চন্দ্রবংশে জন্মিয় এই বুঝি তোমার আচরণ। একটা সামান্য প্রতিজ্ঞা রাখিতে পার না ।” wn ইন্দ্ৰকুমার হাসিয়া বলিলেন, “আচ্ছা, তোমার কথাই রহিল। আজ আমি শিকারে যাইব না।” কমলদেবী। তোমাদের আর কিছু হাৱাইয়াছে ? মনে করিয়া দেখো দেখি । ইন্দ্ৰকুমার । কই, মনে পড়ে না তো । কমলা দেবী । তোমাদের সাত-রাজার-ধন মানিক ? তোমাদের সোনার চাদ ? ইন্দ্ৰকুমার মৃদু হাসিয়া ঘাড় নাড়িলেন । কমলদেবী কহিলেন, “তবে এসো, দেখোসে।” বলিয়া অস্ত্রশালার দ্বারে গিয়া দ্বার খুলিয়া দিলেন। কুমার দেখিলেন রাজধর ঘরের মেজেতে চুপ করিয়া বসিয়া আছেন- দেখিয়া হাে হাে করিয়া হাসিয়া উঠিলেন- “এ কী, রাজধর অস্ত্রশালায় যে ” ইন্দ্ৰকুমার বলিলেন, “তা বটে, উনি সকল অস্ত্রের চেয়ে তীক্ষ।” অনুগ্ধ মেন মেন বললেন, তােমােদর জিহ্বাের চয়ে না। বরঞ্চ ও ইন্তে বারি ইয় তখন কমলদেবী গভীর হইয়া বলিলেন, “না কুমার, তুমি শিকার করিতে যাও । আমি তোমার সত্যু ফিরাইয়া লইলাম।” কমলদেবীর দিকে নিক্ষেপ করিলেন। তীর তীহার পায়ের কাছে পড়িয়া গেল— কুমার বলিলেন, "रुशा ब्लका ऊष्ठं शशेळन |" কমলদেবী বলিলেন, “না, পরিহাস না । তুমি শিকারে যাও।” ইন্দ্ৰকুমার কিছু বলিলেন না। ধনুর্বাণ ঘরের মধ্যে ফেলিয়া বাহির হইয়া গেলেন। যুবরাজকে বলিলেন, "দাদা, আজ শিকারের সুবিধা হইল না।” চন্দ্রনারায়ণ ঈষৎ হাসিয়া বলিলেন, “বুঝিয়াছি।” ११; श्रतिष्छ्त्र আজ পরীক্ষার দিন । রাজবাটীর বাহিরের মাঠে বিস্তর লোক জড়ো হইয়াছে। রাজার ছত্র ও সিংহাসন প্ৰভাতের আলোকে ঝকঝকি করিতেছে। জায়গাটা পাহাড়ে, উচু-নিচু— লোকে আচ্ছন্ন হইয়া গিয়াছে, চারি দিকে যেন মানুষের মাথার ঢেউ উঠিয়াছে। ছেলেগুলো গাছের উপর চড়িয়া বসিয়াছে। একটা ছেলে গাছের ডাল হইতে আস্তে আস্তে হাত বাড়াইয়া একজন মোটা মানুষের মাথা হইতে পাগড়ি তুলিয়া আর-একজনের মাথায় পরাইয়া দিয়াছে। যাহার পাগড়ি সে-ব্যক্তি চটিয়া ডাল নাড়া দিতেছে, ছোড়াটা মুখভঙ্গি করিয়া ডালের উপর বান্দরের মতো নাচিতেছে। মোটা মানুষের দুৰ্দশা ও রাগ দেখিয়া সেদিকে একটা হাে হাে হাসি পড়িয়া গিয়াছে। একজন একহাঁড়ি দই মাথায় করিয়া বাড়ি যাইতেছিল, পথে জনতা দেখিয়া সে দাড়াইয়া গিয়াছিল— হঠাৎ দেখে তাহার মাথায় হাড়ি নাই, হাঁড়িটা মুহুর্তের মধ্যে হাতে হাতে কতদূরচলিয়া গিয়াছে তাহার ঠিকানা নাই— দইওআলা। খানিকক্ষণ হী করিয়া চাহিয়া রহিল। একজন বলিল, “ভাই, তুমি দইয়ের বদলে ঘোল খাইয়া গেলে, কিঞ্চিৎ লোকসান হইল বৈ তো নয়।” দইওআলা। পরম সাস্তুনা পাইয়া গেল । হারু নাপিতের পরে গী-সুদ্ধ লোক চাঁটা ছিল। তাহাকে ভিড়ের মধ্যে দেখিয়া লোকে তাহার নামে ছড়া কাটিতে লাগিল । সে যত খেপিতে লাগিল খেপাইবার দল তত বাড়িয়া উঠিল— চারিদিকে চটপট হাততালি পড়িতে লাগিল। আটান্ন প্রকার আওয়াজ বাহির হইতে লাগিল। সে-ব্যক্তি মুখচক্ষু লাল করিয়া চটিয়া ২ গলদঘর্ম হইয়া, চাদর ভূমিতে লুটাইয়া, একপাট চটিজুতা ভিড়ের মধ্যে হারাইয়া বিশ্বের লোককে অভিশাপ দিতে দিতে বাড়ি ফিরিয়া গেল । ঠাসাঠাসি ভিড়ের মাঝে মাঝে এক-একটা ছোটাে ছেলে