পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

5阁邻两 SS) A ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ রাজধর পরীক্ষা-দিনের পূর্বে যখন কমলদেবীর সাহায্যে ইন্দ্ৰকুমারের অস্ত্রশালায় প্রবেশ করিয়াছিলেন, তখনই ইন্দ্ৰকুমারের তৃণ হইতে ইন্দ্ৰকুমারের নামাঙ্কিত একটি তীর নিজের তৃণে তুলিয়া লইয়াছিলেন এবং নিজের নামাঙ্কিত একটি তীর ইন্দ্ৰকুমারের তুণে এমন স্থানে এমন ভাবে স্থাপিত করিয়াছিলেন, যাহাতে সেইটিই সহজে ও সর্বাগ্রে তাহার হাতে উঠিতে পারে। রাজধর যাহা মনে করিয়াছিলেন, তাহাই ঘটিল। ইন্দ্ৰকুমার দৈবক্রমে রাজধরের স্থাপিত তীরই তুলিয়া লইয়াছিলেনসেইজন্যই পরীক্ষাস্থলে এমন গোলমাল হইয়াছিল। কালক্রমে যখন সমস্ত শান্তভােব ধারণ করিল তখন ইন্দ্ৰকুমার রাজধরের চাতুরী কতকটা বুঝিতে পারিয়াছিলেন, কিন্তু সে কথা আর কাহাকেও কিছু বলিলেন না— কিন্তু রাজধরের প্রতি র্তাহার ঘূণা আরো দ্বিগুণ বাড়িয়া উঠিল। ইন্দ্ৰকুমার মহারাজের কাছে বার বার বলিতে লাগিলেন, “মহারাজ, আরাকানপতির সহিত যুদ্ধে আমাকে পাঠান ।” মহারাজ অনেক বিবেচনা করিতে লাগিলেন । আমরা যে-সময়ের গল্প বলিতেছি। সে আজ প্রায় তিনশো বৎসরের কথা । তখন ত্রিপুরা স্বাধীন ছিল এবং চট্টগ্রাম ত্রিপুরার অধীন ছিল । আরাকান চট্টগ্রামের সংলগ্ন | আরাকানপতি মাঝে মাঝে চট্টগ্রাম আক্রমণ করিতেন । এইজন্য আরাকানের সঙ্গে ত্রিপুরার মাঝে মাঝে বিবাদ বাধিত । অমরমাণিক্যের সহিত আরাকানপতির সম্প্রতি সেইরূপ একটি বিবাদ বাধিয়াছে। যুদ্ধের সম্ভাবনা দেখিয়া ইন্দ্ৰকুমার যুদ্ধে যাইবার প্রস্তাব করিয়াছেন। রাজা অনেক বিবেচনা করিয়া অবশেষে সম্মতি দিলেন। তিন ভাইয়ে পাঁচ হাজার করিয়া পনেরো হাজার সৈন্য লইয়া চট্টগ্রাম অভিমুখে চলিলেন । ইশা খা সৈন্যাধ্যক্ষ হইয়া গেলেন । কর্ণফুলি নদীর পশ্চিম ধারে শিবির-স্থাপন হইল। আরাকানের সৈন্য কতক নদীর ওপারে কতক এপারে । আরাকানপতি অল্পসংখ্যক সৈন্য লইয়া নদীর পরপারে আছেন । এবং তাহার বাইশ হাজার সৈন্য যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হইয়া আক্রমণের প্রতীক্ষায় নদীর পশ্চিম পারে অপেক্ষা করিয়া আছে। যুদ্ধের ক্ষেত্র পর্বতময়। সমুখাসমুখি দুই পাহাড়ের উপর দুই পক্ষের সৈন্য স্থাপিত হইয়াছে। উভয় পক্ষে যদি যুদ্ধ করিতে অগ্রসর হয়, তবে মাঝের উপত্যকায় দুই সৈন্যের সংঘর্ষ উপস্থিত হইতে পারে । পর্বতের চারি দিকে হরীতকী আমলকী শাল ও গাম্ভারির বন । মাঝে মাঝে গ্রামবাসীদের শূন্য গৃহ পড়িয়া রহিয়াছে, তাহারা ঘর ছাড়িয়া পালাইয়াছে। মাঝে মাঝে শস্যক্ষেত্র । পাহাড়িরা সেখানে ধান কাপাস তরমুজ আলু একত্রে রোপণ করিয়া গিয়াছে। আবার এক-এক জায়গায় জুমিয়া চাষীরা এক-একটা পাহাড় সমস্ত দগ্ধ করিয়া কালো করিয়া রাখিয়াছে, বর্ষার পর সেখানে শস্য বপন হইবে । দক্ষিণে কর্ণফুলি, বামে দুৰ্গম পর্বত । এইখানে প্রায় এক সপ্তাহকাল উভয় পক্ষ পরস্পরের আক্রমণপ্রতীক্ষায় বসিয়া আছে। ইন্দ্ৰকুমার যুদ্ধের জন্য অস্থির হইয়াছেন, কিন্তু যুবরাজের ইচ্ছা বিপক্ষপক্ষেরা আগে আসিয়া আক্রমণ করে। সেইজন্য বিলম্ব করিতেছেন- কিন্তু তাহারাও নড়িতে চাহে না, স্থির হইয়া আছে। অবশেষে আক্রমণ করাই স্থির হইল । সমস্ত রাত্রি আক্রমণের আয়োজন চলিতে লাগিল । রাজধর প্রস্তাব করিলেন, “দাদা, তোমরা দুইজনে তোমাদের দশ হাজার সৈন্য লইয়া আক্রমণ করো। আমার পাচ হাজার হাতে থাক, আবশ্যকের সময় কাজে লাগিবে ।” ইন্দ্ৰকুমার হাসিয়া বলিলেন, “রাজধর তফাতে থাকিতে চান।” যুবরাজ কহিলেন, “না, হাসির কথা নয়। রাজধরের প্রস্তাব আমার ভালো বােধ হইতেছে।” ইশা খাও তাঁহাই বলিলেন । রাজধরের প্রস্তাব গ্রাহ্য হইল । যুবরাজ ও ইন্দ্ৰকুমারের অধীনে দশ হাজার সৈন্য পাঁচ ভাগে ভাগ করা হইল। প্রত্যেক ভাগে দুই