পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলাতকা WS “মনুরো কি গেছ ভুলে ।” এ প্রশ্ন কি অনন্ত কাল রাইবে দুলে মোর জগতের চোখের পাতায় একটি ফোটা চোখের জলের মতো । কত চিঠির জবাব লিখব কত, এই কথাটির জবাব শুধু নিত্য বুকে জ্বলবে বহ্নিশিখা, অক্ষরেতে হবে না। আর লিখা । । কালো মেয়ে মরচে-পড়া গরাদে ওই ভাঙা জানলাখানি ; ওইখানেতে বসে থাকে একা, শুকনো নদীর ঘাটে যেন বিনা কাজে নীেকেখানি ঠেকা । বয়স উঠছে জমে | বর জোটে না, চিন্তিত তার বাপ ; সমস্ত এই পরিবারের নিত্য মনস্তাপ দীর্ঘশ্বাসের ঘূর্ণি হাওয়ায় আছে যেন ঘিরে দিবসরাত্রি কালো মেয়েটিরে । সামনে-বাড়ির নীচের তলায় আমি থাকি “ মোস”-এ। বহুকষ্টে শেষে কলেজেতে পার হয়েছি। একটা পরীক্ষায় । আর কি চলা যায় । এমন করে এগজামিনের লগি ঠেলে ঠেলে । দুই বেলাতেই পড়িয়ে ছেলে একটা বেলা খেয়েছি। আধ-পেটা, ভিক্ষা করা সেটা সইত না একবারে, তবু গেছি প্রিন্সিপালের দ্বারে বিনি মাইনেয়, নেহাত পক্ষে, আধা মাইনেয়, ভর্তি হবার জন্যে । এক সময়ে মনে ছিল আধেক রাজ্য এবং রাজার কন্যে মনে ছিল ধনমানের রুদ্ধ ঘরের সোনার চাবি জন্মকালে বিধি যেন দিয়েছিলেন রেখে আমার গোপন শক্তিমাঝে ঢৈকে । আজকে দেখি, নবাবঙ্গে শক্তিটা মোর ঢাকাই রইল, চাবিটা তার সঙ্গে । মনে হচ্ছে, ময়নাপাখির খাচায় অদৃষ্ট তার দারুণ রঙ্গে ময়ুরটাকে নাচায় ;