পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8 O পদে পদে পুচ্ছে বাধে লোহার শলা, কোন কৃপণের রচনা এই নাট্যকলা । কোথায় মুক্ত অরণ্যানী, কোথায় মত্ত বাদল-মেঘের ভেরী । এ কী বাধীন রাখল আমায় ঘেরি । ঘুরে ঘুরে উমেদারির ব্যর্থ আশে শুকিয়ে মারি রোদুরে আর উপবাসে । প্ৰাণটা হাপায়, মাথা ঘোরে, তক্তপোশে শুয়ে পড়ি ধপাস করে । হাতপাখাটিার বাতাস খেতে খেতে হঠাৎ আমার চোখ পড়ে যায় উপরোতেমরচে-পড়া গরাদে ওই, ভাঙা জানলাখানি, বসে আছে পাশের বাড়ির কালো মেয়ে নন্দরানী । মনে হয় যে, রোদের পরে বৃষ্টিভরা থমকে-যাওয়া মেঘে ক্লান্ত পরান জুড়িয়ে গেল কালো পরশ লেগে । আমি যে ওর হৃদয়খনি চোখের ”পরে স্পষ্ট দেখি আঁকা ; ও যেন জুইফুলের বাগান সন্ধ্যা-ছায়ায় ঢাকা ; একটুখানি চাদের রেখা কৃষ্ণপক্ষে স্তব্ধ নিশীথ রাতে কালো জলের গহন। কিনারাতে । কালো পাথর বেয়ে বেয়ে লুকিয়ে ঝরে ধীরি ধীরি। রাত-জাগা এক পাখি, মৃদু করুণ কাকুতি তার তারার মাঝে মিলায় থাকি থাকি । ও যেন কোন ভোরের স্বপন কান্নাভিরা, ঘন ঘুমের নীলাঞ্চলের বঁাধন দিয়ে ধরা । রাখাল ছেলের সঙ্গে বসে বটের ছায়ে ছুটির দিনে হঠাৎ কেমন আকুল করল প্ৰাণ । আমি ছাড়া সকল ছেলেই গেছে যে যার দেশে, একলা থাকি “ মোস”-এ। মেঠো গানের সুর যা ছিল মনে । ওই যে ওদের কালো মেয়ে নন্দ রানী যেমনতরো ওর ভাঙা ওই জানলাখানি, যেখানে ওর কালো চোখের তারা কালো আকাশতলে দিশেহারা ; যেখানে ওর এলোচুলের স্তরে স্তরে বাতাস এসে করত খেলা আলস-ভরে ; যেখানে ওর গভীর মনের নীরব কথাখিনি আপন দোসর খুঁজে পেত আলোর নীরব বাণী ;