পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8述)の রবীন্দ্র-রচনাবলী আজ বৃহৎ সম্মিলনের মধ্যে শক্তি-উপলব্ধির দিন, শক্তিসংগ্রহের দিন । আজ তুমি আমাদিগকে বিচ্ছিন্ন জীবনের প্রাত্যহিক জড়ত্ব প্ৰত্যহিক ঔদাসীন্য হইতে উদবােধিত করো, প্রতিদিনের নিবীৰ্য নিশ্চেষ্টতা হইতে আরাম-আবেশ হইতে উদ্ধার করে । যে কঠোরতায় যে উদ্যমে যে আত্মবিসর্জনে আমাদের সার্থকতা, তাহার মধ্যে আজ আমাদিগকে প্রতিষ্ঠিত করো। আমরা এতগুলি মানুষ একত্র হইয়াছি। আজ যদি, যুগে যুগে তোমার মনুষ্যসমাজের মধ্যে যে সত্যের গীেরব যে প্রেমের গৌরব যে মঙ্গলের গীেরব যে কঠিনবীর্য নিৰ্ভীক মহত্ত্বের গৌরব উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছে, তাহা না দেখিতে পাই, দেখি কেবল ক্ষুদ্র দীপের আলোক, তুচ্ছ ধনের আড়ম্বর, তবে সমস্তই ব্যর্থ হইয়া গেল— যুগে যুগে মহাপুরুষের কণ্ঠ হইতে যে-সকল অভয়বাণী-অমৃতবাণী উৎসারিত হইয়াছে, তাহা যদি মহাকালের মঙ্গলশঙ্খ নির্ঘোষের মতো আজ না শুনিতে পাই— শুনি কেবল লৌকিকতার কলকলা এবং সাম্প্রদায়িকতার বাগবিন্যাস- তবে সমস্তই ব্যর্থ হইয়া গেল। এই সমস্ত ধনাড়ম্বরের নিবিড় কুজুটিকারাশি ভেদ করিয়া একবার সেই সমস্ত পবিত্র দৃশ্যের মধ্যে লইয়া যাও— যেখানে ধূলি-শয্যায় নগদেহে তোমার সাধক বসিয়া আছেন যেখানে তোমার সর্বত্যাগী সেবক কর্তব্যের কঠিন পথে রিক্ত হন্তে ধাবমান হইয়াছেন- যেখানে তোমার বরপুত্ৰগণ দারিদ্র্যের দ্বারা নিস্পিষ্ট, বিষয়ীদের দ্বারা পরিত্যক্ত, মদান্ধিদের দ্বারা অপমানিত । হায় দেব, সেখানে কোথায় দীপচ্ছটা, কোথায় বাদ্যোদাম, কোথায় স্বর্ণভাণ্ডার, কোথায় মণিমাল্য । কিন্তু সেইখানে তেজ, সেইখানে শক্তি, সেইখানে দিবৈশ্বৰ্য্য, সেইখানেই তুমি । দূর করো, দূর করো এই-সমস্ত আবরণ আচ্ছাদন, এই সমস্ত ক্ষুদ্র দম্ভ, এই সমস্ত মিথ্যা কোলাহল, এই-সমস্ত অপবিত্র আয়োজন— মনুষ্যত্বের সেই অভ্ৰভেদিচুড়াবিশিষ্ট নিরাভরণ নিস্তব্ধ রাজনিকেতনের দ্বারের সম্মুখে অদ্য আমাকে দাড় করাইয়া দাও । সেখানে, সেই কঠিন ক্ষেত্রে সেই রিক্ত নিৰ্জনতার মধ্যে, সেই বহুযুগের অনিমেষ দৃষ্টিপাতের সম্মুখে তোমার নিকট হইতে দীক্ষা লাইব প্ৰভু । ना७ श्रठ जूलि নিজহাতে তোমার অমোঘ শরগুলি, তোমার অক্ষয় তৃণ। অস্ত্রে দীক্ষা দেহে রণগুরু । তোমার প্রবল পিতৃস্নেহ ধ্বনিয়া উঠক আজি কঠিন আদেশে । করো মোরে সম্মানিত নববীরবেশে, দুরূহ কর্তব্যভারে, দুঃসহ কঠোর বেদনায় । পরাইয়া দাও অঙ্গে মোর ক্ষতচিহ্ন-অলংকার । ধন্য করো দাসে সফল চেষ্টায় আর নিম্বফল প্ৰয়াসে । な国 >○>> 13 জগৎসংসাবের বিধান সম্বন্ধে যখনই আমরা ভাবিয়া দেখিতে যাই তখনই, এ বিশ্বরাজ্যে দুঃখ কেন আছে, এই প্রশ্নই সকলের চেয়ে আমাদিগকে সংশয়ে আন্দোলিত করিয়া তোলে । আমরা কেহ বা তাহাকে মানবপিতামহের আদিম পাপের'শাস্তি বলিয়া থাকি- কেহ বা তাহাকে জন্মান্তরের কর্মফল বলিযা জানি— কিন্তু তাহাতে দুঃখ তো দুঃখই থাকিয়া যায় । না থাকিয়া যে জো নাই। দুঃখের তত্ত্ব আর সৃষ্টির তত্ত্ব যে একেবারে একসঙ্গে বাধা । কারণ, অপূর্ণতাই তো দুঃখ এবং সৃষ্টিই যে অপূর্ণ।