পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পলাতক সেই মহেশের পাশে পাড়ায় যারে পাগল বলে হাসে । পাছে পাছে ছেলেগুলো সঙ্গে যে তার লেগেই আছে । তাদের কলরবে: নানান উপদ্রবে: একমুহূর্ত পায় না। শান্তি, তবু তাহার নাই কিছুতেই ক্লান্তি । বেগার-খাটা কাজ তারই ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে কেউ মানে না লাজ । যতই সে গায়, বেসুর ততই চলে বেড়ে । তাই নিয়ে কেউ ঠাট্টা করলে এসে মহেশ বলে হোসে, “আমার এ গান শোনাই র্যারে বেসুর শুনে হাসেন তিনি, বুক ভরে সেই হাসির পুরস্কারে । তিনি জানেন, সুর রয়েছে প্ৰাণের গভীর তলায়, বেসুর কেবল পাগলের এই গলায় ।” সকল প্রয়োজনের বাহির সে যে সৃষ্টিছাড়া, তার ঘরে তাই সকলে পায় সাড়া । একটা রোগা কুকুর ছিল, নাম ছিল তার ভুতো, একদা কার ঘরের দাওয়ায় ঢুকেছিল অনাহুত, পথের ধারে পড়ে ছিল মর-মার, খোড়া কুকুরটারে বঁচিয়ে তুলে রাখলে মহেশ আপনি ঘরের দ্বারে । আরেকটি তার পোষ্য ছিল, ডাক-নাম তার সুমি, কেউ জানে না জাত যে কী তার, মুসলমান কি কাহার কিংবা কুর্মি । সে-বছরে প্রয়াগেতে কুম্ভমেলায় নেয়ে ফিরে আসতে পথে দেখে চার বছরের মেয়ে কেঁদে বেড়ায় বেলা দুপুর দুটােয় । মা নাকি তার ওলাউঠোয় মরেছে সেই সকালবেলায় ; পাক খেয়ে সে বেড়াচ্ছিল ভয়েই ভেবাচেকা— মহেশকে যেই দেখা কী ভেবে যে হাত বাড়াল জানি না কোন ভুলে ; অমনি পাগল নিল তারে কাধের পরে তুলে, ভোলানাথের জটায় যেন ধুতরোফুলের কুঁড়ি ; সে অবধি তার ঘরের কোণটি জুড়ি S 8W)