পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

سمیہ" 8፫! ○ a যে পার্থে, এই যে অধোতে, এই যে উর্ধের্ব- এই যে কিছুই গুপ্ত নাই। এ যে সমস্তই সুস্পষ্ট । এ যে আমার ইন্দ্ৰিয়মনকে অহােরাত্রি অধিকার করিয়া রহিয়াছে। সি এবাধস্তাৎ স উপরিষ্টাং স পশ্চাৎ স পুরস্তাং স দক্ষিণতঃ স উত্তরতঃ । এই তো প্রকাশ, এ ছাড়া আর প্রকাশ কোথায় ? এই যে যাহাকে আমরা প্রকাশ বলিতেছি, এ কেমন করিয়া হইল ? তাহার ইচ্ছায়, তাহার আনন্দে, তাহার অমৃতে । আর তো কোনো কারণ থাকিতেই পারে না । তিনি আনন্দিত, সমস্ত প্রকাশ এই কথাই বলিতেছে। যাহা-কিছু আছে, এ-সমস্তই তাহার আনন্দরূপ, তাহার অমৃতরূপ, সুতরাং ইহার কিছুই অপ্রকাশ হইতে পারে না । তাহার আনন্দকে কে আচ্ছন্ন করিবে ? এমন মহন্ধকার কোথায় আছে ? ইহার কণাটিকেও ধ্বংস করিতে পারে, এমন শক্তি কার % এমন মৃত্যু কোথায় % এ যে ग्रJउटं । সত্যং জ্ঞানমনন্তম । তিনি বাক্যের মনের অতীত । কিন্তু অতীত হইয়া রহিলেন কই ? এই যে দশ দিকে তিনি আনন্দরূপে আপনাকে একেবারে দান করিয়া ফেলিতেছেন। তিনি তো লুকাইলেন না ! যেখানে আনন্দে অমৃতে তিনি অজস্র ধরা দিয়াছেন, সেখানে প্রাচুর্যের অন্ত কোথায়, সেখানে বৈচিত্রের যে সীমা নাই ; সেখানে কী ঐশ্বৰ্য্য, কী সৌন্দর্য । সেখানে আকাশ যে শতধা বিদীর্ণ হইয়া আলোকে আলোকে নক্ষত্রে নক্ষত্রে খচিত হইয়া উঠিল, সেখানে রূপ যে কেবলই নূতন নূতন, সেখানে প্রাণের প্রবাহ যে আর ফুরায় না । তিনি যে আনন্দরূপে নিজেকে নিয়তই দান করিতে বসিয়াছেনলোকে-লোকান্তরে সে-দান আর ধারণ করিতে পারিতেছে না— যুগে-যুগান্তরে তাহার আর অন্ত দেখিতে পাই না । কে বলে তাহাকে দেখা যায় না ; কে বলে, তিনি শ্রবণের অতীত ; কে বলে, তিনি ধরা দেন না ? তিনিই যে প্রকাশমান— আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি । সহস্ৰ চক্ষু থাকিলেও যে দেখিয়া শেষ করিতে পারিতাম না, সহস্ৰ কৰ্ণ থাকিলেও শোনা ফুৱাইত কবে ? যদি ধরিতেই চাও, তবে বাহু কতদূর বিস্তার করিলে সে-ধরার অন্ত হইবে ? এ যে আশ্চর্য । মানুষজন্ম লইয়া এই নীল আকাশের মধ্যে কী চোেখই মেলিয়াছি ! এ কী দেখাই দেখিলাম। দুটি কর্ণপুট দিয়া অনন্ত রহস্যলীলাময় স্বরের ধারা অহরহ পান করিয়া সে ফুরাইল না । সমস্ত শরীরটা যে আলোকের স্পর্শে বায়ুর স্পর্শে স্নেহের স্পশে প্রেমের স্পর্শে কল্যাণের স্পর্শে বিদ্যুৎতন্ত্রীখচিত অলৌকিক বীণার মতো বারংবার স্পন্দিত ঝংকৃত হইয়া উঠিতেছে । ধন্য হইলাম, আমরা ধন্য হইলাম— এই প্রকাশের মধ্যে প্রকাশিত হইয়া ধন্য হইলাম— পরিপূর্ণ আনন্দের এই আশ্চর্য অপরিমেয় প্রাচুর্যের মধ্যে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐশ্বর্যের মধ্যে আমরা ধন্য হইলাম । ধূলিকে আজ ধূলি বলিয়া অবজ্ঞা করিয়াে না, তৃণকে আজ তৃণজ্ঞান করিয়াে না— তোমার ইচ্ছায় এ ধূলিকে পৃথিবী হইতে মুছতে পার না, এ ধূলি তাহার ইচ্ছা ; তোমার ইচ্ছায় এ তৃণকে অবমানিত করিতে পার না, এ শ্যামল তৃণ তাঁহারই আনন্দ মূর্তিমান । তাহার আনন্দপ্রবাহ আলোকে উচ্ছসিত হইয়া আজ বহুলক্ষক্রোশ দূর হইতে নবজাগরণের দেবদূতরূপে তােমার সুপ্তির মধ্যে প্রবেশ করিয়াছে, ইহাকে ভক্তির সহিত অন্তঃকরণে গ্রহণ করো, ইহার স্পর্শের যোগে আপনাকে সমস্ত আকাশে ব্যাপ্ত করিয়া দাও । আজ প্রভাতের এই মুহুর্তে পৃথিবীর অর্ধভূখণ্ডের নবজাগ্ৰত সংসারে কর্মের কী তরঙ্গই জাগিয়া উঠিয়াছে! এই-সমস্ত প্রবল প্ৰয়াস, এই-সমস্ত বিপুল উদযোগে যত পুঞ্জ-পুঞ্জ সুখদুঃখ-বিপৎসম্পদ গ্রামে-গ্রামে নগরে-নগরে দূরে-দূরান্তরে হিল্লেলিত-ফেনায়িত হইয়া উঠিতেছে, সমস্তই কেবল তাহার ইচ্ছা, তাহার আনন্দ, ইহাই জানিয়া পৃথিবীর সমস্ত লোকালয়ের কর্মকলরবের সংগীতকে একবার স্তব্ধ হইয়া অধ্যাত্মকৰ্ণে শ্রবণ করো— তার পরে সমস্ত অন্তঃকরণ দিয়া বলো— সুখে-দুঃখে তাহারই আনন্দ, লাভে-ক্ষতিতে তাহারই আনন্দ, জন্মে-মরণে র্তাহারই আনন্দ- সেই “আনন্দং ব্ৰহ্মণো বিদ্বান ন বিভেতি কুতশচন”— ব্রহ্মের আনন্দকে যিনি জানেন, তিনি কাহা হইতেও ভয়প্রাপ্ত হন না। ক্ষুদ্র স্বাৰ্থ ভুলিয়া, ক্ষুদ্র অহমিকা দূর করিয়া তোমার নিজের অন্তঃকরণকে একবার আনন্দে