পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 রবীন্দ্র-রচনাবলী সুমি আছে ওই পাগলের পাগলামির এক স্বচ্ছ শীতল ধারা : হিমালয়ে নিবরিণীর পারা । এখন তাহার বয়স হবে দাশ, খেতে শুতে অষ্টপ্রহর মহেশ তারই বশ । আছে পাগল ওই মেয়েটির খেলার পুতুল হয়ে । যত্নসেবার অত্যাচারটা সয়ে । সন্ধ্যাবেলায় পাড়ার থেকে ফিরে যেমনি মহেশ ঘরের মধ্যে ঢোকে ধীরে ধীরে, পথ-হারানো মেয়ের বুকে আজো যেন জাগায় ব্যাকুলতা— বুকের পরে ঝাপিয়ে পড়ে গলা ধীরে আবোলতাবোল কথা । এই আদরের প্রথম-বানের টান হলে অবসান ওদের বাসায় আমি যেতেম রাতে । সামান্য কোন কথা হত এই পাগলের সাথে । নাইকো পুঁথি, নাইকো ছবি, নাই কোনো আসবাব, চিরকালের মানুষ যিনি ওই ঘরে তার ছিল আবির্ভাব । তারার মতো আপন আলো নিয়ে বুকের তলে— যে-মানুষটি যুগ হতে যুগান্তরে চলে, প্ৰাণখনি র্যার বঁাশির মতো সীমাহীনের হাতে র্যার চরণের সম্পর্শে ধুলায় ধুলায় বসুন্ধরা উঠিল কেঁপে হৰ্ষে, আমি যেন দেখতে পেতেম তীরে দীনের বাসায়, এই পাগলের ভাঙা ঘরের দ্বারে । যেতেম। সবই ভুলি । ভুলে যেতেম রাজার কারা মস্ত বড়ো প্রতিনিধি । বালুর পরে রেখার মতো গড়ছে রাজ্য, লিখছে বিধান বিধি । তোমার ছুটি নীল আকাশে, তোমার ছুটি মাঠে, তোমার ছুটি থাইহারা ওই দিঘির ঘাটে ঘাটে । গোলাবাড়ির কোণে, তোমার ছুটি ঝোপেকাপে পারুলডাঙার বনে ।