পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৫৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ( \bԳ বলেন আচ্ছা বেশ ৷ বলে চুপ করে সরে বসে থাকেন। এ দিকে কখন এক সময়ে ইশ হয় যে আমার আত্মার যে নিভৃত নিকেতন, সেখানকার চাবি তো আমার খাতাঞ্জির হাতে নেই— টাকাকড়ি ধনদৌলত তো সেখানে কোনোমতে পীেছোয় না। ফাক থেকেই যায়। সেখানকার সেই একলা ঘরটি জগতের আর একটি মহান একলা ছাড়া কেউ কোনোমতেই ভরাতে পারে না । যেদিন বলতে পারব। আমার টাকায় কাজ নেই, খ্যাতিতে কােজ নেই, কিছুতেই কাজ নেই, তুমি এসো ; যেদিন বলতে পারব চন্দ্ৰসূৰ্যহীন আমার এই একলা ঘরটিতে তুমি আমার আর আমি তোমার, সেই দিন আমার বরশয্যায় বর এসে বসবেন— সেই দিন আমার আমি সার্থক হবে । সেদিন একটি আশ্চর্য ব্যাপার এই ঘটবে যে, নিজেকে যতই দীন বলে জানব তার প্রেমকে ততই বড়ো করে বুঝব । তার প্রেমের ঐশ্বর্যের উপলব্ধিতে তার প্রেমকেই অনন্ত বলে জানিব নিজেকে বড়ো করে দাড়াব না । জ্ঞান পেলে নিজেকে জ্ঞানী বলে গর্ব হয়। কিন্তু প্ৰেম পেলে নিজেকে অধম বলে জেনেও আনন্দ হয়। পাত্র যতই গভীররূপে শূন্য হয় সুধারাসে ভরে উঠলে ততই সে বেশি করে পূর্ণ হয় । এইজন্যে প্রেম যখন লাভ করি তখন নিজেকে বড়ো করে জানাবার কোনো ইচ্ছাই হয় নাবরঞ্চ নিজের অত্যন্ত দীনতা নিজেকে অত্যন্ত সুখ দেয়- তখন তার লীলার ভিতরকার একটি মস্ত বিরোধের সার্থকতা বুঝতে পারি এবং সেই বিরোধকে স্বীকার করে আনন্দের সঙ্গে বলতে পারি যে, । পরিপূর্ণ, ততই কৃতাৰ্থ । আমি অনন্ত ভাবে দীন বলেই দুর্বল বলেই তার অনন্ত প্রেমের দ্বারা ধনা হয়েছি । ১৭ পৌয ইচ্ছা! সকালবেলা থেকেই আমার সংসারের কথা ভাবতে আরম্ভ করেছি। কেননা, এ যে আমার সংসার । আমার ইচ্ছােটুকুই হচ্ছে এই সংসারের কেন্দ্র। আমি কী চাই কী না চাই, আমি কাকে রাখব। কাকে ছাড়ব সেই কথাকে মাঝখানে নিয়েই আমার সংসার । আমাকে বিশ্বভুবনের ভাবনা ভাবতে হয় না। আমার ইচ্ছার দ্বাবা সূর্য উঠছে না, বায়ু বইছে না, অণুপরমাণুতে মিলন হয়ে বিচ্ছেদ হয়ে সৃষ্টিরক্ষা হচ্ছে না। কিন্তু আমি নিজের ইচ্ছাশক্তিকে মূলে রেখে যে সৃষ্টি গড়ে তুলছি তার ভাবনা আমাকে সকলের চেয়ে বড়ো ভাবনা করেই ভাবতে হয় কেননা সেটা যে আমারই ভাবনা | তাই এত বড়ো বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের ব্যাপারের ঠিক মাঝখানে থেকেও আমার এই অতি ছোটাে সংসারের আতি ছোটাে কথা আমার কাছে ছোটাে বলে মনে হয় না। আমার প্রভাতের সামান্য আয়োজন চেষ্টা প্রভাতের সুমহৎ সূর্যোদয়ের সম্মুখে লেশমাত্র লজ্জিত হয় না ; এমন-কি, তাকে অনায়াসে বিস্মৃত হয়ে চলতে পারে । এই তো দেখতে পাচ্ছি দুইটি ইচ্ছা পরস্পর সংলগ্ন হয়ে কাজ করছে। একটি হচ্ছে বিশ্ব-জগতের ভিতরকার ইচ্ছা, আর-একটি আমার এই ক্ষুদ্র জগতের ভিতরকার ইচ্ছা। রাজা তো রাজত্ব করেন আবার তীর অধীনস্থ তালুকদার, সেও সেই মহারাজ্যের মাঝখানেই আপনার রাজত্বটুকু বসিয়েছে। তাঁর মধ্যেও রাজৈশ্বর্যের সমস্ত লক্ষণ আছে- কেননা ঐ ক্ষুদ্র সীমাটুকুর মধ্যে তার ইচ্ছা তার কর্তৃত্ব বিরাজমান । এই যে আমাদের আমি জগতের মধ্যে ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেককে রাজা করে দিয়েছেন- যে