পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

(፩brbr রবীন্দ্র-রচনাবলী আমার ধন আমার মনের বোঝা নিয়ে মরেছি। যখনই স্বপ্ন ভেঙে যায় বুঝতে পারি। তুমি পরম-আমি আছ- আমার আমি তারই জোরে আমি— তখনই এক মুহুর্তে মুক্তিলাভ করি।” কিন্তু শুধু তো মুক্তিলাভ নয়। তার পরে পরম অধীনতা ! পরাম-আমির কাছে সমস্ত আমিত্বর অভিমান জলাঞ্জলি দিয়ে একেবারে অনন্ত পরিপূর্ণ অধীনতার পরমানন্দ । S NQ な下5 আত্মা যে শরীরকে আশ্রয় করে সেই শরীর তাকে ত্যাগ করতে হয় । কারণ আত্মা শরীরের চেয়ে বড়ো । কোনো বিশেষ এক শরীর যদি আত্মাকে বরাবর ধারণ করে থাকতে পারত, তা হলে আত্মা যে শরীরের মধ্যে থেকেও শরীরকে অতিক্রম করে তা আমরা জানতেই পারতুম না । এই কারণেই আমরা মৃত্যুর দ্বারা আত্মার মহত্ত্ব অবগত হই । আত্মা এই হ্রাসবৃদ্ধিমরণশীল শরীরের মধ্যে নিজেকে ব্যক্তি করে । তার এই প্রকাশ বাধাপ্রাপ্ত প্রকাশ, সম্পূর্ণ প্রকাশ নয় ; এইজন্যে শরীরকেই আত্মা বলে যে জানে সে সম্পূর্ণ সত্য জানে না । মানুষের সত্যজ্ঞান এক-একটি মতবাদকে আশ্রয় করে নিজেকে প্রকাশ করতে চেষ্টা করে ; কিন্তু সেই মতবাদটি সত্যের শরীর, সুতরাং এক হিসেবে সত্যের চেয়ে অনেক ছোটাে এবং অসম্পূর্ণ এইজনে সত্যকে বারংবার মতদেহ পরিবর্তন করতে হয়। বৃহৎ সত্য তার অসম্পূর্ণ মতদেহের সমস্ত শক্তিকে শেষ করে ফেলে, তাকে জীৰ্ণ করে, বৃদ্ধ করে, অবশেষে যখন কোনো দিকেই আর কুলোয় না, নানা প্রকারেই সে অপ্রয়োজনীয় বাধাস্বরূপ হয়ে আসে, তখন তার মৃত্যুর সময় আসে । তখন তার নানাপ্রকার বিকার ও ব্যাধি ঘটতে থাকে ও শেষে মৃত্যু হয় । আত্মা যে কোনো-একটা বিশেষ শরীর নয় এবং সমস্ত বিশেষ শরীরকেই সে অতিক্রম করে এই কথাটা যেমন উপলব্ধি করা আমাদের দরকার এবং এই উপলব্ধি জন্মালে যেমন আত্মার বিকার : মৃত্যুর কল্পনায় আমরা ভীত ও পীড়িত হই নে— সেইরকম, মানুষ যে-সকল মহৎ সত্যকে নানা দেশে নানা কালে নানা রূপে প্ৰকাশ করতে চেষ্টা করছে এক-একবার তাকে তার মতদেহ থেকে স্বতন্ত্র করে সত্য-আত্মাকে স্বীকার করা আমাদের পক্ষে অত্যন্ত আবশ্যক । তা হলেই সত্যের অমৃতস্বরূপ জানতে পেরে আমরা আনন্দিত হই । নইলে কেবলই মত এবং বাকা নিয়ে বিবাদ করে আমরা অধীর হতে থাকি, এবং আমার মত স্থাপন করব ও অন্যের মত খণ্ডন করব এই অহংকার সুতীব্র হয়ে উঠে জগতে পীড়ার সৃষ্টি করে । এইক” বিবাদের সময় মতই প্রবল হয়ে উঠে সত্যকে যতই দূরে ফেলতে থাকে বিরোধের বিষও ততই তীব্রতর হয়ে ওঠে । এই কারণে, মতের অত্যাচার যেমন নিষ্ঠুর ও মতের উন্মত্ততা যেমন উদ্দাম, এমন আর কিছুই না। এই কারণেই সীতা আমাদের ধৈৰ্যদান করে কিন্তু মত আমাদের ধৈর্যহরণ করে । দৃষ্টান্তস্বরূপে বলতে পারি অদ্বৈতবাদ ও দ্বৈতবাদ নিয়ে যখন আমরা বিবাদ করি তখন আমরা মত নিয়েই বিবাদ করি, সত্য নিয়ে নয়— সুতরাং সত্যকে আচ্ছন্ন করে বিস্মত হয়ে আমরা এক দিকে ক্ষতিগ্ৰস্ত হই, আর-এক দিকে বিরোধ করে আমাদের দুঃখ ঘটে । আমাদের মধ্যে র্যারা নিজেকে দ্বৈতবাদী বলে ঘোষণা করেন তারা অদ্বৈতবাদকে বিভীষিকা বলে কল্পনা করেন । সেখানে তারা মতের সঙ্গে রাগারগি করে সত্যকে পর্যন্ত একঘরে করতে চান যারা ‘অদ্বৈতম। এই সত্যটিকে লাভ করেছেন, তাদের সেই লাভটির মধ্যে প্রবেশ করে । তাদের কথায় যদি এমন-কিছু থাকে যা তোমাকে আঘাত করে সে দিকে মন দেবার দরকার নেই । মায়াবাদ ! শুনলেই অসহিষ্ণু হয়ে ওঠ কেন । মিথ্যা কি নেই ? নিজের মধ্যে তার কি কোনো