পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন (?brS পরিচয় পাওয়া যায় নি ? সত্য কি আমাদের কাছে একেবারেই উন্মুক্ত ? আমরা কি এককে আর বলে জানি নে ? কাঠকে দগ্ধ করে যেমন আগুন জ্বলে আমাদের অজ্ঞানকে, অবিদ্যাকে, মায়াকে দগ্ধ করেই কি আমাদের সত্যের জ্ঞান জুলছে না ? আমাদের পক্ষে সেই মায়ার ইন্ধন জ্ঞানের জ্যোতি-লাভের জন্য প্রয়োজনীয় হতে পারে, কিন্তু এই মিথ্যা কি ব্ৰহ্ম আছে ? অনন্তের মধ্যে ভূত ভবিষ্যৎ বর্তমান যে একেবারে পর্যবসিত হয়ে আছে, অথচ আমার কাছে খণ্ডভাবে তা পরিবর্তনপরম্পরারূপে চলেছে, কোথাও তার পর্যাপ্তি নেই। এক জায়গায় ব্রহ্মের মধ্যে যদি কোনো পরিসমাপ্তি না থাকে, তবে আমরা এই-য়ে খণ্ড কালের ক্রিয়াকে অসমাপ্ত বলছি, একে অসমাপ্ত আখ্যা দেবারও কোনো তাৎপর্য থাকত না । এই খণ্ডকালের অসমাপ্তি এক দিকে : নিন্তকে প্রকাশও করছে, এক দিকে আচ্ছন্নও করছে। যে দিকে আচ্ছন্ন করছে সে দিকে তাকে কী লব ? তাকে মায়! বলব না কি ? মিথ্যা বলব না কি ? তবে "মিথ্যা’ শব্দটার স্থান কোথায় ? যিনি খণ্ড কালের সমস্ত খণ্ডত সমস্ত ক্রমিকতার আক্রমণ থেকে ক্ষণকালের জন্যও বিমুক্ত হয়ে অনন্ত পরিসমাপ্তির নির্বিকার নিরঞ্জন অতলম্পর্শ মধ্যে নিজেকে নিঃশেষে নিমজ্জিত করে দিয়ে সেই স্তব্ধ শান্ত গভীর অদ্বৈত্রসসমূদ্রে নিবিড়ানন্দের নিশ্চল স্থিতিলাভ করেছেন তীকে আমি ভক্তির সঙ্গে নমস্কার করি । আমি তার সঙ্গে কোনো কথা নিয়ে বাদপ্রতিবাদ করতে চাই নে । । কেননা, আমি যে অনুভব করছি মিথার বোঝায় আমার জীবন ক্লািস্ত ; আমি যে দেখতে পাচ্ছি, যে পদার্থটাকে ‘আমি বলে ঠিক করে বসে আছি তারই থালা ঘটি বাটি তারই স্থাবর অস্থাবরের বােঝাকে সত্য পদাৰ্থ বলে ভ্ৰম করে সমস্ত জীবন টেনে বেড়াচ্ছি- যতই দুঃখ পাই কোনােমতেই তাকেই ফেলতে পাৱি নে ! অথচ অন্তরাত্মার ভিতরে একটা বাণী আছে-- ও সমস্ত মিথ্যা, ও সমস্ত তোমাকে ত্যাগ করতেই হবে । মিথ্যার বস্তাকে সত্য বলে বহন করতে গেলে তুমি বঁাচবে না- তা হলে তোমার ‘মহতী বিনষ্টিঃ' ' নিজের অহংকারকে, নিজের দেহকে, টাকাকড়িকে, খতি-প্রতিপত্তিকে একান্ত সত্য বলে জেনে অস্থির হয়ে বেড়াচ্ছি। এই যদি হয়, তবে এই মিথ্যার সীমা কোথায় টানব % বৃদ্ধির মূলে যে ভ্ৰম থাকতে আমি নিজেকে ভুল জািনছি, সেই ভ্ৰমই কি সমস্ত জ%ংসম্বন্ধেও আমাদের ভোলাচ্ছে না ? সেই ভ্ৰমই কি আমার জগতের কেন্দ্ৰস্থলে আমার ‘আমি টিকে স্থাপন করে মরীচিকা রচনা করছে না ? তাই, ইচ্ছা কি করে না। এই মাকড়সার জাল একেবারে ছিন্নভিন্ন পরিষ্কার করে দিয়ে সেই পরমাত্মার, সেই পরম-আমির, সেই একটিমাত্র আমির মাঝখানে অহংকারের সমস্ত আবরণ -বিবর্জিত হয়ে অবগাহন করি— ভারমুক্ত হয়ে, বাসনামুক্ত হয়ে, মলিনতামুক্ত হয়ে একেবারে সুবৃহৎ পরিত্রাণ লাভ করি % এই ইচ্ছা যে অন্তরে আছে, এই বৈরাগ্য যে সমস্ত উপকরণের ধাঁধার মাঝখানে পথভ্রষ্ট বালকের মতো থেকে থেকে কেঁদে উঠছে। তবে আমি মায়াবাদকে গািল দেব কোন মুখে । আমার মনের মধ্যে যে এক শ্মশানবাসী বসে আছে, সে যে আর কিছুই জানে না, সে যে কেবল জানে-- একমেবাদ্বিতীয়ম। S is