পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WOV রবীন্দ্ৰ-রচনাবলী কেবল বাহিরের নিয়মপালনমাত্র হবে না । ঘে-পর্যন্ত তা না হয়, যে-পর্যন্ত বাহিরই আমাদের কাছে একান্ত, যে-পর্যন্ত বাহিরই সমস্তকে অত্যন্ত আড়াল করে দাড়িয়ে সমস্ত অবকাশ রোধ করে ফেলে-- সে-পর্যন্ত কেবলই বলতে হবে ভাবে তীরে অন্তরে যে বিরাজে। অন্য কথা ছাড়ো না । সংসারসংকটে ত্ৰাণ নাহি কোনোমতে বিনা তার সাধনা | কেননা, সংসারকে একমাত্র জানলেই সংসাব সংকটময় হয়ে ওঠে- তখনই সে অরাজ অনাথকে পেয়ে বসে, তার সর্বনাশ করে ছাড়ে । প্রতিদিন এসো, অন্তরে এসো । সেখানে সব কোলাহল নিরস্ত হােক, কোনো আঘাত না পৌঁছোক, কোনো মলিনতা না স্পর্শ করুক ! সেখানে ক্রোধকে পালন কোরো না, ক্ষোভকে প্রশ্রয় দিয়ে না, বাসনাগুলিকে হাওয়া দিয়ে জ্বলিয়ে রেখো না, কেননা সেইখানেই তোমার তীর্থ, তোমার দেবমন্দির { সেখানে যদি একটু নিরালা না থাকে। তবে জগতে কোথাও নিরালা পাবে না, সেখানে যদি কলুষ পোষণ কর তবে জগতে তোমার সমস্ত পূণ্যস্থানের ফটক বন্ধ | এসো সেই অক্ষুব্ধ নির্মল অন্তরের মধ্যে এসো, সেই অনন্তের সিন্ধুতীরে এসো, সেই অত্যুচ্চের গিরিশিখরে এসো। সেখানে করজোড়ে দাড়াও, সেখানে নত হয়ে নমস্কার করো । সেই সিন্ধুর উদার জলরাশি থেকে, সেই গিরিশৃঙ্গের নিত্যবহমান নিঝরধারা থেকে, পুণ্যসলিল প্রতিদিন উপাসনান্তে বহন করে নিয়ে তোমাক বাহিরের সংসারের উপর ছিটিয়ে দাও ; সব পাপ যাবে, সব দাহ দূর হবে। 8 शन्ि বিভাগ ভিতরের সঙ্গে বাহিরের যে একটি সুনির্দিষ্ট বিভাগ থাকলে আমাদের জীবন সুবিহিত সুশৃঙ্খল সুসম্পূর্ণ হয়ে ওঠে, সেইটে আমাদের ঘটে নি । বিভাগটি ভালোরকম না হলে ঐকাটিও ভালোরকম হয় না । অপরিণতি যখন পিণ্ডাকারে থাকে, যখন তার কলেবর বৈচিত্র্যে বিভক্ত না হয়েছে, তখন তার মধ্যে একের মূর্তি পরিস্ফুট হয় না ; আমাদের মধ্যে খুব একটি বড়ো বিভাগের স্থান আছে, সেটি হচ্ছে অন্তর এবং বাহিরের বিভাগ । যতদিন সেই বিভাগটি বেশ সুনির্দিষ্ট না হবে ততদিন অন্তর ও বাহিরের ঐকাটিও পরিপূর্ণ তাৎপর্ঘ্যে সুন্দর হয়ে উঠবে না । এখন আমাদের এমনি হয়েছে আমাদের একটিমাত্র মহিলা : স্বার্থপরামর্থ নিতা-অনিত্য সমস্তই আমাদের ঐ এক জায়গায় যেমন-তেমন করে রাখা ছাড়া উপায় নেই । সেইজনো একটা অন্যটাকে আঘাত করে, বাধা দেয়, একের ক্ষতি অন্যেরা ক্ষতি হয়ে ওঠে ? যে-জিনিসটা বাহিরের তাকে বাহিরেই রাখতে হবে, তাকে অন্তরে নিয়ে গিয়ে তুললে সেখানে সেন্ট জঞ্জাল হয়ে ওঠে । সেখানে যার স্থান নয়। সেখানে সে যে অনাবশ্যক তা নয়, সেখানে সে অনিষ্টকর } অতএব আমাদের জীবনের প্রধান সাধনাই এই-- বাহিরের জিনিস যাতে বাহিরেই থাকতে পারে, ভিতরে গিয়ে যাতে সে বিকারের সৃষ্টি না করে । , সংসারে আমাদের পদে পদে ক্ষতি হয়, আজ যা আছে কাল তা থাকে না | সেই ক্ষতিকে আমরা বাহিরের সংসারেই কেন রাখি না ? তাকে আমরা ভিতরে নিয়ে গিয়ে তুলি কেন ? গাছের পাতা আজ কিশলয়ে উদগত হয়ে কাল জীর্ণ হয়ে ঝরে পড়ে। কিন্তু সে তো বাইরেই ঝরে পড়ে যায় । সেই তার বাহিরের অনিবাৰ্য ক্ষতিকে গাছ তার মজ্জার ভিতরে তো পোষণ করে না ; ܫܒܚܝܝܝܝܝܣܬ