পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন Vos দেখে- দেখতে পাবে আত্মার মধ্যে পরমাত্মার আনন্দ নিশিদিন আবির্ভূত হয়ে রয়েছে, এক মুহূর্ত তার বিরাম নেই। পরমাত্মা এই জীবাত্মায় আনন্দিত । যেখানে সেই প্রেমের নিরন্তর মিলন সেইখানে প্ৰবেশ করো, সেইখানে তাকাও । তা হলেই ব্রহ্মের আনন্দ যে কী, তা নিজের অন্তরের মধ্যেই উপলব্ধি করবে, এবং তা হলেই কোনোদিন কিছু হতেই তোমার আর ভয় থাকবে না । ভয় তোমার কোথায় ? যেখানে আধিব্যাধি জরা মৃত্যু বিচ্ছেদমিলন, যেখানে আনাগোনা, যেখানে সুখদুঃখ । আত্মাকে কেবলই যদি সেই বাহিরের সংসারেই দেখ— যদি তাকে কেবলই কার্য থেকে কার্যন্তরে, বিষয় থেকে বিষয়াস্তরেই উপলব্ধি করতে থােক, তাকে বিচিত্রের সঙ্গে চঞ্চলের সঙ্গেই একেবারে জড়িত মিশ্রিত করে এক করে জান, তা হলেই তাকে নিতান্ত দীন করে মলিন করে দেখবে, তা হলেই তাকে মৃত্যুর দ্বারা বেষ্টিত দেখে কেবলই শোক করতে থাকবে, যা সত্য নয় স্থায়ী নয় তাকেই আত্মার সঙ্গে জড়িত করে সত্য বলে স্থায়ী বলে ভ্ৰম করবে এবং শেষকালে সে-সমস্ত যখন সংসারের নিয়মে খসে পড়তে থাকবে তখন মনে হবে যেন আত্মারই ক্ষয় হচ্ছে, বিনাশ হচ্ছে- এমনি করে বারংবার শোকে নৈরাশ্যে দগ্ধ হতে থাকবে । সংসারকেই তুমি ইচ্ছা করে বড়ো পদ দেওয়াতে সংসার তোমার দত্ত সেই জোরে তোমার আত্মাকে পদে পদে অভিভূত পরাস্ত করে দেবে। কিন্তু আত্মাকে অন্তরধামে নিত্যের মধ্যে ব্রহ্মের মধ্যে দেখো, তা হলেই হৰ্ষশোকের সমস্ত জোর চলে যাবে। তা হলে ক্ষতিতে নিন্দাতে পীড়াতে মৃত্যুতে কিসেই বা ভয় ? জয়ী, আত্মা জয়ী | আত্মা ক্ষণিক সংসারের দাসানুদাস নয়— আত্মা অনন্তে অমরতায় প্রতিষ্ঠিত | আত্মায় ব্রহ্মের আনন্দ আবির্ভূত। সেইজন্য আত্মাকে র্যারা সত্যরূপে জানেন তারা ব্ৰহ্মের আনন্দকে জানেন এবং ব্রহ্মের আনন্দকে যারা জানেন র্তারা- ন বিভৌতি কদাচন । পরমে ব্ৰহ্মণি যোজিতচিত্তঃ নন্দতি নন্দতি নন্দত্যেব । । পরমব্রহ্মের মধ্যে র্যারা আপনাকে যুক্ত করে দেখেছেন তারা নন্দিত হন, নন্দিত হন, নন্দিতই হন । আর, সংসারে যারা নিজেকে যুক্ত করে জানেন তারা শোচতি শোচতি শোচত্যেব । ৭. ফায়ুন ১৩১৫ পরিণয় চারি দিকে সংসারে আমরা দেখছি— সৃষ্টিব্যাপার চলছেই। যা ব্যাপ্ত তা সংহত হচ্ছে, যা সংহত তা ব্যাপ্ত হচ্ছে। আঘাত হতে প্ৰতিঘাত, রূপ হতে রূপান্তর চলেইছে- এক মুহূর্ত তার কোথাও বিরাম নেই। সকল জিনিসই পরিণতির পথে চলেছে, কিন্তু কোনো জিনিসেরই পরিসমাপ্তি নেই । আমাদের শরীর-বুদ্ধি-মনও প্রকৃতির এই চক্রে ঘুরছে, ক্রমাগতই তার সংযোগবিয়োগ হ্রাসবৃদ্ধি তার অবস্থান্তর bGब्जgछ | প্রকৃতির এই সূৰ্যতারাময় লক্ষকোটি চাকার রথ ধাবিত হচ্ছে— কোথাও এর শেষ গম্যস্থান দেখি নে, কোথাও এর স্থির হবার নেই। আমরাও কি এই রথে চড়েই এই লক্ষ্যহীন অনন্তপথেই চলেছি, যেন এক জায়গায় যাবার আছে এইরকম মনে হচ্ছে অথচ কোনোকালে কোথাও :ে পারছি নে ? আমাদের অস্তিত্বই কি এইরকম অবিশ্রাম চলা, এইরকম অনন্ত সন্ধান ? এর মধ্যে কোথাও কোনোরকম প্ৰাপ্তির, কোনোরকম স্থিতির তত্ত্ব নেই ? এই যদি সত্য হয়, দেশকালের বাইরে আমাদের যদি কোনো গতিই না থাকে, তা হলে যিনি দেশকালের অতীত, যিনি অভিব্যঞ্জমান নন, যিনি আপনাতে পরিসমাপ্ত, তিনি আমাদের পক্ষে একেবারেই নেই। সেই পূর্ণতার স্থিতিধর্ম যদি আমাদের মধ্যে একান্তই না থাকে, তবে অনন্তস্বরূপ