পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৩৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন \οΣ Σ সংসার আমাদের মধ্যে নেই, কিন্তু ব্ৰহ্ম আমাদের মধ্যেই আছেন । এইজন্য সংসারকে সহস্ৰ চেষ্টায় আমরা পাই নে, ব্ৰহ্মকে আমরা পেয়ে বসে আছি । পরমাত্মা আমাদের আত্মাকে বরণ করে নিয়েছেন— তার সঙ্গে এর পরিণয় একেবারে সমাধা হয়ে গেছে। তার আর কোনো কিছু বাকি নেই, কেননা তিনি একে স্বয়ং লরণ করেছেন। কোন অনাদিকালে সেই পরিণয়ের মন্ত্র পড়া হয়ে গেছে। বলা হয়ে গেছে-- যাদে তৎ হৃদয়ং মম তদন্তু হৃদয়ং তব | এর মধ্যে আর ক্রমাভিব্যক্তির পৌরোহিত্য নেই । তিনি ‘আসা’ 'এষঃ' হয়ে আছেন । তিনি এর এই রয়ে বসেছেন, নাম করবার জো নেই। তাই তো ঋষি কবি বলেন--- এষাস্য পরম গতিঃ, এষাস্য পরম সম্পাৎ, এষোহস পরমোলোক%, এযোহস পরম আনন্দঃ । পরিণয় তো সমাপ্তই হয়ে গেছে, সেখানে আর কোনো কথা নেই । এখন কেবল অনন্ত প্রেমের লীলা। র্যাকে পাওয়া হয়ে গেছে তাকেই নানারকম করে পাচ্ছি— সুখে দুঃখে, বিপদে সম্পদে, লোকে লোকান্তরে ৷ বধু যখন সেই কথাটা ভালো করে বােঝে। তখন তার আর কোনাে ভাবনা থাকে না । তখন সংসারকে তার স্বামীর সংসার বলে জানে, সংসার তাকে আর পীড়া দিতে পারে না- সংসারে তার আর ক্লান্তি নেই, সংসারে তার প্ৰেম । তখন সে জানে যিনি সত্যং জ্ঞানমনস্তং হয়ে অন্তরাত্মাকে চিরদিনের মতো গ্রহণ করে আছেন, সংসারে তীরেই আনন্দরূপমমৃতং বিভাতি- সংসারে তারই প্রেমের লীলা এইখানেই নিত্যের সঙ্গে অনিতোর চিরযোগা— আনন্দের, অমৃতের যোগ । এইখানেই আমাদের সেই বরকে, সেই চিরপ্রাপ্তকে, সেই একমাত্র প্রাপ্তকে বিচিত্র বিচ্ছেদ মিলনের মধ্যে দিয়ে, পাওয়া না-পাওয়ার বহুতর ব্যবধান-পরম্পরার ভিতর দিয়ে, নানা রকমে পাচ্ছি ; র্যাকে পেয়েছি তাকেই আবার হারিয়ে হারিয়ে পাচ্ছি, তাকেই নানা রসে পাচ্ছি। যে বধূর মৃঢ়তা ঘুচিছে, এই কথাটা যে জেনেছে, এই রস যে বুঝেছে, সেই আনন্দং ব্ৰহ্মণো বিদ্বান ন বিভেতি কদাচন। যে না জেনেছে, যে সেই বরকে ঘোমটা খুলে দেখে নি, বরের সংসারকেই কেবল দেখেছে, সে, যেখানে তার রানীর পদ সেখানে দাসী হয়ে থাকে- ভয়ে মরে, দুঃখে কঁাদে, মলিন হয়ে বেড়ায়— দীেভিক্ষ্যাৎ যাতি দৌভিক্ষাং ক্লেশাৎ ক্লেশং ভয়াৎ ভয়ম | ৯ ফাল্গুন ১৩১৫ V) তিনতলা আমাদের তিনটে অবস্থা দেখতে পাই । তিনটে বড়ো বড়ো স্তরে মানবজীবন গড়ে তুলছে- একটা প্রাকৃতিক, একটা ধৰ্মনৈতিক, একটা আধ্যাত্মিক । প্রথম অবস্থায় প্রকৃতিই আমাদের সব । তখন আমরা বাইরেই থাকি। তখন প্রকৃতিই আমাদের সমস্ত উপলব্ধির ক্ষেত্র হয়ে দাঁড়ায় । তখন বাইরের দিকেই আমাদের সমুদয় প্রবৃত্তি, সমুদয় চিন্তা, সমুদয় প্রয়াস। এমন-কি, আমাদের মনের মধ্যে যা গড়ে ওঠে তাকেও আমরা বাইরে স্থাপন না করে থাকতে পারি না- আমাদের মনের জিনিসগুলিও আমাদের কল্পনায় বাহ্যরূপ গ্ৰহণ করতে থাকে । আমরা সত্য তাকেই বলি যাকে দেখতে ছুতে পাওয়া যায়। এইজন্য আমাদের দেবতাকেও আমরা কোনো বাহ্য পদার্থের মধ্যে বদ্ধ করে অথবা তাকে কোনো বাহ্যরূপ দান করে, আমরা তঁাকে প্রাকৃতিক বিষয়েরই সামিল করে দিই। বাহিরের এই দেবতাকে আমরা বাহ্য প্রক্রিয়া -দ্বারা শান্ত করবার চেষ্টা করি। তার সম্মুখে বলি দিই, খাদ্য দিই, তাকে কাপড় পরাই। তখন দেবতার অনুশাসনগুলিও বাহ্য