পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

○>br রবীন্দ্র-রচনাবলী চেয়ে যেটা কম দেওয়া অন্তত সেই দেওয়াটাও তীকে দেব । সেইটুকু দিতেও যে বাধাটা অতিক্রম করতে হয়, যে জড়তা মোচন করতে হয়, সেটাতেও যেন কুষ্ঠিত না হই । অত্যন্ত দরিদ্রের যে রিক্তপ্রায় দান সেও যেন প্রত্যহই নিষ্ঠার সঙ্গে তার কাছে এনে দিতে পারি। র্যাকে সমস্ত জীবন উৎসর্গ করবার কথা, দিনের সকল কর্মে সকল চিন্তায় র্যাকে রাজা করে বসিয়ে রাখতে হবে, তাকে কেবল মুখের কথা দেওয়া, কিন্তু তাও দিতে হবে । আগাগোড়া সমস্তই কেবল সংসারকে দেব। আর তাকে কিছুই দেব না, তাকে প্রত্যেক দিনের মধ্যে একান্তই “না” করে রেখে দেব, এ তো কোনোমতেই হতে পারে না | দিনের আরম্ভে প্ৰভাতের অরুণোদয়ের মাঝখানে দাড়িয়ে এই কথাটা একবার স্বীকার করে যেতেই হবে যে, পিতা নোহসি– তুমি পিতা, আছ । আমি স্বীকার করছি তুমি পিতা । আমি স্বীকার করছি তুমি আছ। একবার বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডের মাঝখানে দাড়িয়ে কেবল এই কথাটি বলে যাবার জন্যে তোমাদের সংসার ফেলে চলে আসতে হবে । কেবল সেইটুকু সময় থােক তোমাদের কাজকর্ম থাক তোমাদের আমোদপ্রমোদ । আর সমস্ত কথার উপরে এই কথাটি বলে যাও- পিতা নোহসি । তার জগৎসংসারের কোলে জন্মে, তার চন্দ্ৰসূর্যের আলোর মধ্যে চোখ মেলে, জাগরণের প্রথম মুহূর্তে এই কথাটি তোমাদের জোড়হাতে প্রত্যহ বলে যেতে হবে ; ওঁ পিতা নোহসি । এ আমি তোমাদের জোর করেই বলে রাখছি। এত বড়ো বিশ্বে এবং এমন মহৎ মানবজীবনে তাকে কোনো জায়গাতেই একটুও স্বীকার করবে না- এ তো কিছুতেই হতে পারবে না । তোমার অপরিস্ফুট চেতনাকেও উপহার দাও, তোমার শূন্য হৃদয়কেও দান করো, তোমার শুষ্কতা রিক্ততাকেই তার সম্মুখে ধরো, তোমার সুগভীর দৈন্যকেই তার কাছে নিবেদন করে । তা হলেই যে দয়া অযাচিতভাবে প্রতি মুহূর্তেই তোমাৰ উপরে বর্ষিত হচ্ছে সেই দয়া ক্রমশই উপলব্ধি করতে থাকবে । এবং প্রত্যহ ঐ যে অল্প একটু বাতায়ন খুলবে সেইটুকু দিয়েই অন্তৰ্য্যামীর প্ৰেমমুখেব প্ৰসন্ন হাস্য প্রত্যহই তোমার অন্তরকে জ্যোতিতে অভিষিক্ত করতে থাকবে । ১৩ ফাল্লুন প্রার্থনা হে সত্য, আমার এই অন্তরাত্মার মধ্যেই যে তুমি অন্তহীন সত- তুমি আছ। এই আত্মায় তুমি যে আছ, দেশে কালে গভীরতায় নিবিড়তায় তার আর সীমা নাই । এই আত্মা অনন্তকাল এই মন্ত্রটি বলে আসছে।-- সন্তাং ! তুমি আছ, তুমিই আছ । আত্মার অতলস্পর্শ গভীরতা হতে এই যে মন্ত্রটি উঠছে, তা যেন আমার মনের এবং সংসারের অন্যান্য সমস্ত শব্দকে ভরে সকলের উপরে জেগে ওঠেসত্যং সত্যং সত্যং ! সেই সত্যে আমাকে নিয়ে যাও— সেই আমার অন্তরাত্মার গৃঢ়তম অনন্ত সতো।-- যেখানে “তুমি আছ" ছাড়া আর কোনো কথাটি নেই। হে জ্যোতির্ময়, আমার চিদাকাশে তুমি জ্যোতিষাং জ্যোতিঃ । তোমার অনন্ত আকাশের কোটি সূর্যলোকে যে জ্যোতি কুলোয় না, সেই জ্যোতিতে আমার অন্তরাত্মা চৈতন্যে সমুদ্ভাসিত । সেই আমার অন্তরাকাশের মাঝখানে আমাকে দাড় করিয়ে আমাকে আন্দোপান্ত প্ৰদীপ্ত পবিত্রতায় ক্ষালন করে ফেলো, আমাকে জ্যোতির্ময় করো, আমার অন্য সমস্ত পরিবেষ্টনকে সম্পূর্ণ বিস্মৃত হয়ে সেই শুভ্ৰ শুদ্ধ অপাপবিদ্ধ জ্যোতিঃশরীরকে লাভ করি । - হে অমৃতস্বরূপ, আমার অন্তরাত্মার নিভৃত ধামে তুমি আনন্দং পরমানন্দং । সেখানে কোনোকালেই তোমার মিলনের অন্ত নেই। সেখানে তুমি কেবল আছ না, তুমি মিলেছ ; সেখানে তোমার কেবল সত্য নয়, সেখানে তোমার আনন্দ । সেই তোমার অনন্ত আনন্দকে তোমার জগৎসংসারে ছড়িয়ে