পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন \ον δ দিয়েছ। গতিতে প্ৰাণে সৌন্দর্যে সে আর কিছুতে ফুরোয় না, অনন্ত আকাশে তাকে আর কোথাও ধরে না | সেই তোমার সীমাহীন আনন্দকেই আমার অন্তরাত্মার উপরে স্তব্ধ করে রেখেছি। সেখানে তোমার সৃষ্টির কাউকে প্রবেশ করতে দাও নি, সেখানে আলোক নেই, রূপ নেই, গতি নেই ; কেবল নিস্তব্ধ নিবিড় তোমার আনন্দ রয়েছে। সেই আনন্দধামের মাঝখানে দাঁড়িয়ে একবার ডাক দাও প্ৰভু । আমি যে চার দিকে ছড়িয়ে পড়েছি, তোমার অমৃত-আহবান আমার সংসারের সর্বত্র ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হােক, অতি দূরে চলে যাক, অতি গোপনে প্রবেশ করুক। সকল দিক থেকেই আমি যেন যাই যাই বলে সাড়া দিই। ডাক দাও- ওরে আয় আয়, ওরে ফিরে আয়, চলে আয় । এই অন্তরাত্মার অনন্ত আনন্দধামে আমার যা-কিছু সমস্তই এক জায়গায় এক হয়ে নিস্তব্ধ হয়ে চুপ করে বসুক, খুব গভীরে, খুব গোপনে । হে প্রকাশ, তোমার প্রকাশের দ্বারা আমাকে একেবারে নিঃশেষ করে ফেলো- আমার আর কিছুই বাকি রেখে না, কিছুই না, অহংকারের লেশমাত্র না । আমাকে একেবারেই তুমিময় করে তোলো । কেবলই তুমি, তুমি, তুমিময় । কেবলই তুমিময় জ্যোতি, কেবলই তুমিময় আনন্দ । হে রুদ্র, পাপ দগ্ধ হয়ে ভস্ম হয়ে যাক। তোমার প্রচণ্ড তাপ বিকীর্ণ করো। কোথাও কিছু লুকিয়ে না থাকুক, শিকড় থেকে বীজভরা ফল পর্যন্ত সমস্ত দগ্ধ হয়ে যাক । এ যে বহুদিনের বহু দুশ্চেষ্টার ফল, শাখার গ্রন্থিতে গ্ৰন্থিতে পাতার আড়ালে আড়ালে ফলে রয়েছে । শিকড় হৃদয়ের রসাতল পর্যন্ত নেমে গিয়েছে । তোমার রুদ্রতাপের এমন ইন্ধন আর নেই । যখন দগ্ধ হবে তখনই এ সার্থক হতে থাকবে । তখন আলোকের মধ্যে তার অন্ত হবে । তার পরে, হে প্ৰসন্ন, তোমার প্রসন্নতা আমার সমস্ত চিন্তায় বাক্যে কর্মে বিকীর্ণ হতে থােক। আমার তনু করে তুলুক । জগতে এই শরীর তোমার প্রসাদ অমৃতের পবিত্র পাত্র হয়ে বিরাজ করুক। তোমার সেই প্ৰসন্নতা আমার বুদ্ধিকে প্রশান্ত করুক, হৃদয়কে পবিত্র করুক, শক্তিকে মঙ্গল করুক। তোমার প্ৰসন্নতা তোমার বিচ্ছেদসংকট থেকে আমাকে চিরদিন রক্ষা করুক | তোমার প্রসন্নতা আমার চিরন্তন অন্তরের ধন হয়ে আমার চিরজীবনপথের সম্বল হয়ে থােক । আমারই অন্তরাত্মার মধ্যে তোমার যে সত্য, যে জ্যোতি, যে অমৃত, যে প্রকাশ রয়েছে তোমার প্রসন্নতা দ্বারা যখন তাকে উপলব্ধি করব তখনই রক্ষা পাব । S8 राष्ट्रन বৈরাগ্য যজ্ঞবল্ক্য বলেছেন ন বা অরে পুত্ৰস্য কামায় পুত্রঃ প্রিয়ো ভবতি— আত্মনস্তু কামায় পুত্রঃ প্রিয়ো ভবতি । অর্থাৎ- k পুত্রকে কামনা করছি বলেই যে পুত্র তোমার প্রিয় হয় তা নয়, কিন্তু আত্মাকেই কামনা করছি বলে পুত্র প্রিয় शयः । এর তাৎপর্য হচ্ছে এই যে, আত্মা পুত্রের মধ্যে আপনাকেই অনুভব করে বলেই পুত্র তার আপনি হয়, এবং সেইজন্যেই পুত্রে তার আনন্দ । আত্মা যখন স্বাৰ্থ এবং অহংকারের গণ্ডির মধ্যে আবদ্ধ হয়ে নিরবচ্ছিন্ন একলা হয়ে থাকে তখন সে বড়োই স্নান হয়ে থাকে, তখন তার সত্য স্মৃর্তি পায় না। এইজন্যেই আত্মা পুত্রের মধ্যে, মিত্রের মধ্যে, Գ||8O