পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V2 Rbr রবীন্দ্র-রচনাবলী ক্ষুধা আমার কোনখানে মিটবে, আশ্রয় আমি কোনখানে পাব।— সে প্রশ্নের কোনো উত্তর না পেয়েই হতবুদ্ধি হয়ে যাত্রা শেষ করতে হল। হে সত্য, আর কিছু নয়, যে দিকে তুমি, যে দিকে সত্য, সেই দিকে আমার মুখ ফিরিয়ে দাও— আমি যে কেবল অসত্যের দিকে তাকিয়ে আছি। তোমার আনন্দলীলামঞ্চে তুমি সারি সারি আলো জ্বলিয়ে দিয়েছ— আমি তার উলটাে দিকের অন্ধকারে তাকিয়ে ভেবে মরছি এ সমস্ত কী। তােমার জ্যোতির দিকে আমাকে ফেরাও । আমি কেবলই দেখছি মৃত্যু- তার কোনো মানেই ভেবে পাচ্ছি নে, ভয়ে সারা হয়ে যাচ্ছি। ঠিক তার ওপাশেই যে অমৃত রয়েছে, তার মধ্যে সমস্ত মানে রয়েছে সে কথা আমাকে কে বুঝিয়ে দেবে ? হে আবিঃ- তুমি যে প্রকাশরাপে নিরস্তর রয়েছ- সেই প্রকাশের দিকেই আমার দৃষ্টি নেই। আমি হতভাগা । সেইজন্যে আমি কেবল তোমাকে রুদ্রই দেখছি, তোমার প্ৰসন্নতা যে আমার আত্মাকে নিয়ত পরিবেষ্টিত করে রয়েছে তা জানতেই পারছি নে | মার দিকে পিঠ করে শিশু অন্ধকার দেখে কেঁদে মরে- একবার পাশ ফিরলেই জানতে পারে মা যে তাকে আলিঙ্গন করেই রয়েছেন । তোমার প্রসন্নতার দিকেই তুমি আমাদের পাশ ফিরিয়ে নাও হে জননী, তা হলেই এক মুহুর্তে জানতে পারব আমি রক্ষা পেয়েই আছি, অনন্তকাল আমার রক্ষা— নইলে অরক্ষাভয়ের কান্না কোনোমতেই থামবে না । »b* श्रृन्न মরণ ঈশ্বরের সঙ্গে খুব একটা শৌখিন রকমের যোগ রক্ষা করার মতলব মানুষের দেখতে পাই । যেখানে যা যেমন আছে তা ঠিক সেইরকম রেখে সেইসঙ্গে আমনি ঈশ্বরকেও রাখবার চেষ্টা । তাতে কিছুই নাড়ােনাড়ি করতে হয় না । ঈশ্বরকে বলি, তুমি ঘরের মধ্যে এসো। কিন্তু সমস্ত বঁচিয়ে এসো— দেখো আমার কাচের ফুলদানিটা যেন না পড়ে যায়, ঘরের নানাস্থানে যে নানা পুতুল সাজিয়ে রেখেছি তার কোনোটা যেন ঘা লেগে ভেঙে না যায়। এ আসনটায় বোসো না, এটাতে আমার অমুক বসে ; এ জায়গায় নয়, এখানে আমি অমুক কাজ করে থাকি ; এ ঘর নয়, এ আমার অমুকের জন্যে সাজিয়ে রাখছি। এই করতে করতে সব চেয়ে কম জায়গা এবং সব চেয়ে অনাবশ্যক স্থানটাই আমরা তার জনো ছেড়ে দিই । মনে আছে আমার পিতার কোনো ভূতোর কাছে ছেলেবেলায় আমরা গল্প শুনেছি যে, সে যখন পুরীতীর্থে গিয়েছিল তার মহা ভাবনা পড়েছিল জগন্নাথকে কী দেবে। তাকে যা দেবে সে তো কখনো সে আর ভোগ করতে পারবে না, সেইজন্যে সে যে জিনিসের কথাই মনে করে কোনোটাই তার দিতে মন সরে না- যাতে তার অল্পমাত্রও লোভ আছে সেটাও, চিরদিনের মতো দেবার কথায়, মন আকুল করে তুলতে লািগল । শেষকালে বিস্তর ভেবে সে জগন্নাথকে বিলিতি বেগুন দিয়ে এল। এই ফলটিতেই সে লোকের সব চেয়ে কম লোভ ছিল । আমরাও ঈশ্বরের জন্যে কেবলমাত্র সেইটুকুই ছাড়তে চাই যেটুকুতে আমাদের সব চেয়ে কম লোভ- যেটুকু আমাদের নিতান্ত উদ্যুবৃত্তের উদ্যাবৃত্ত । ঈশ্বরের-নাম-গাথা দুটাে-একটা মন্ত্র পাঠ করা গেল, দুটি-একটি সংগীত শোনা গেল, র্যােরা বেশ ভালো বক্তৃতা করতে পারেন তাদের কাছ থেকে নিয়মিত বক্তৃতা শোনা গেল। বললুম বেশ হল, বেশ লাগল, মনটা এখন বেশ পবিত্র ঠেকছে- আমি ঈশ্বরের উপাসনা করলুম। একেই আমরা বলি উপাসনা । যখন বিদ্যার ধানের বা মানুষের উপাসনা করি তখন সেটা এত সহজ