পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

V(?V f রবীন্দ্র-রচনাবলী অর্থাৎ চলা না-চলা দূর নিকট, ভিতর বাহির, সমস্তর মাঝখানে সমস্তকে নিয়ে তিনি ; কাউকে ছেড়ে তিনি নন। এইজন্যই তিনি ওঁ । - তিনি প্রকাশ ও অপ্রকাশের মাঝখানে । এক দিকে সমস্তই তিনি প্রকাশ করছেন, আর-এক দিকে কেউ তাকে প্রকাশ করে উঠতে পারছে না। তাই উপনিষদ বলেন ন তত্ৰ সূর্যোিভতি ন চন্দ্ৰতারকং তস্য ভাসা সর্বমিদং বিভাতি । সেখানে সূর্য আলো দেয় না, চন্দ্র তারাও না, এই বিদ্যুৎসকলও দীপ্তি দেয় না, কোথায় বা আছে। এই অগ্নিতিনি প্রকাশিত তাই সমস্ত প্ৰকাশমান, তার আভাতেই সমস্ত বিভাত । তিনি শান্তম শিবম অদ্বৈতম। শাস্তুম বলতে এ বোঝায় না। সেখানে গতির সংস্রব নেই। সকল বিরুদ্ধ গতিই সেখানে শান্তিতে ঐক্যলাভ করেছে। কেন্দ্রাতিগ এবং কেন্দ্ৰানুগ গতি, আকর্ষণের গতি এবং বিকর্ষণের গতি, পরম্পরকে কাটতে চায় কিন্তু এই দুই বিরুদ্ধ গতিই তার মধ্যে অবিরুদ্ধ বলেই তিনি শান্তম। আমার স্বাৰ্থ তোমার স্বার্থকে মানতে চায় না, তোমার স্বার্থে আমার স্বার্থকে মানতে চায় না, কিন্তু মাঝখানে যেখানে মঙ্গল সেখানে তোমার স্বার্থই আমার স্বার্থ এবং আমার স্বার্থই তোমার স্বার্থ। তিনি শিব, তার মধ্যে সকলেরই স্বাৰ্থ মঙ্গলে নিহিত রয়েছে। তিনি অদ্বিতীয়, তিনি এক । তার মানে এ নয় যে, তবে এ-সমস্ত কিছুই নেই। তার মানে, এই সমস্তই তাতে এক। আমি বলছি “আমি তুমি নয়, তুমি বলছি তুমি আমি নয়, এমন বিরুদ্ধ আমাকে-তােমাকে এক করে রয়েছেন সেই অদ্বৈতম | মিথুন যেখানে মিলেছে, সেইখানেই হচ্ছেন তিনি- কেউ যেখানে বর্জিত হয় নি সেইখনেই তিনি। এই যে পরিপূর্ণতা, যা সমস্তকে নিয়ে অথচ যা কোনো খণ্ডকে আশ্রয় করে নয়—যা চন্দ্রে নয়, সূর্যে নয়, মানুষে নয়। অথচ সমস্ত চন্দ্র সূর্য মানুষে— যা কানে নয়, চােখে নয়, বাক্যে নয়, মনে নয় অথচ সমস্ত কনে চোখে বাক্যে মনে- সেই এককেই, সেই ইকেই- সমস্ত মনপ্ৰাণ দিয়ে সেই পরিপূর্ণতাকেই স্বীকার হচ্ছে ওঙ্কার । , Sc CD श्७ाद०७ মানুষের একদিন ছিল যখন সে যেখানে কিছু অদ্ভুত দেখত সেইখানে ঈশ্বরের কল্পনা করত। যদি দেখলে কোথাও জলের থেকে আগুন উঠছে অমনি সেখানে পূজার আয়ােজন করত। তখন সে কোনো একটা অসামান্য লক্ষণ দেখে বা কল্পনা করে বলত অমুক মানুষে দেবতা ভর করেছেন, অমুক গাছে দেবতার আবির্ভাব হয়েছে, অমুক মূর্তিতে দেবতা জাগ্রত হয়ে আছেন। ক্রমে অখণ্ড বিশ্বনিয়মকে চরাচরে যখন সর্বত্র এক বলে দেখবার শিক্ষা মানুষের হল তখন সে জানতে পারল যে, যাকে অসামান্য বলে মনে হয়েছিল সেও সামান্য নিয়ম হতে ভ্ৰষ্ট নয়। তখনই ' ব্ৰহ্মের আবির্ভাবকে অখণ্ডভাবে সর্বত্র ব্যাপ্ত করে দেখবার অধিকার সে লাভ করল । এবং সেই বিরাট অবিচ্ছিন্ন ঐক্যের ধারণায় সে আনন্দ ও আশ্রয় পেল। তখনই মানুষের জ্ঞান প্রেম কর্ম মোহমুক্ত হয়ে প্রশস্ত এবং প্রসন্ন হয়ে উঠল। তার ধর্ম থেকে, সমাজ থেকে, রাজ্য থেকে মুঢ়তা ক্ষুদ্রতা দূর হতে ठळ | এই দেখা হচ্ছে ব্ৰহ্মকে সর্বত্র দেখা, স্বভাবে দেখা।