পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শান্তিনিকেতন ۲۹ এই-যে যোগ, এই যোগটি দিয়ে তোমাতে আমাতে বিশেষভাবে যাতায়াত, তোমাতে আমাতে বিশেষভাবে দেনাপাওনা। এই যোগটিকে যেন আমি সম্পূর্ণ সজ্ঞানে সম্পূর্ণ সবলে অবলম্বন করি। তাই আমার প্রার্থনা এই যে, পিতা নো বোধি, তুমি যে পিতা আমাকে সেই বোধটি দাও । তুমি তোপিতা নোহস, পিতা আছ ; কিন্তু শুধু আছ বললে তো হবে না- পিতা নো বোধি, তুমি আমার পিতা হয়ে আছ এই বোধটি আমাকে দাও । আমার চৈতন্য ও বুদ্ধি -যোগে যে-কিছু জ্ঞান আমি পাচ্ছি সমস্তই তার কাছ থেকে পাচ্ছি- ধিয়ো য়োনঃ প্ৰচোদয়াৎ, যিনি আমাদের ধীশক্তিসকল প্রেরণ করছেন । যিনি বিশ্বব্ৰহ্মাণ্ডকে অখণ্ড এক করে রয়েছেন, তার কাছ থেকে ছাড়া কোনো জ্ঞান, আর কোথা পাব ! কিন্তু সেইসঙ্গে যেন এই বোধট্রিকু পাই যে তিনিই দিচ্ছেন । তিনিই পিতারূপে আমাকে জ্ঞান দিচ্ছেন এই বোধট্রিকু আমার অন্তরে থাকলে তবেই তাকে আমি যথার্থভাবে নমস্কার করতে পারি। আমি সমস্তই তার কাছ থেকে নিচ্ছি, পাচ্ছি, তবু তাকে নমস্কার করতে পারছি নে, আমার মন শক্ত হয়েই আছে, মাথা উদ্ধত হয়েই রয়েছে। কেননা তীর সঙ্গে আমার যে যোগ সেটা আমার বোধে খুঁজে পাচ্ছি নে । তাই আমাদের প্রার্থনা এই যে, নমস্তেহস্তু | তোমাতে আমাদের নমস্কারটি যেন হয় । সেটি যেন নম্রতায় আত্মসমর্পণে পরিপূর্ণ হয়ে তোমার পায়ের কাছে এসে নামে। আমার সমস্ত জীবন যেন তোমার প্রতি নমস্কাররূপে পরিণত হয় । · তোমার সঙ্গে আমার সম্বন্ধই এই যে, তুমি আমাকে দেবে। আর আমি নমস্কারে নত হয়ে পড়ে তা গ্ৰহণ করব । এই নমস্কারটি অতি মধুর। এ জলভারনত মেঘের মতো, ফলভারনত শাখার মতো, রসে ও মঙ্গলে পরিপূর্ণ। এই নমস্কারের দ্বারা জীবন কল্যাণে ভরে ওঠে, সৌন্দর্যে উপচে পড়ে। এই নমস্কার যে কেবল নিবিড় মাধুর্যতা নয়, এ প্রবল শক্তি। এ যেমন অনায়াসে গ্রহণ করে ও বহন করে, উদ্ধত অহংকার তেমন করে পারে না। একে কেউ পরাভূত করতে পারে না। জীবন এই নমস্কারের দ্বারা সমস্ত আঘাত ক্ষতি বিপদ ও মৃত্যুর উপরে অতি সহজেই জয়ী হয়। এই নমস্কারের দ্বারা জীবনের সমস্ত ভার এক মুহুর্তে লঘু হয়ে যায়, পাপ তার উপর দিয়ে মুহুর্তকালীন বন্যার মতো চলে যায়, তাকে ভেঙে দিয়ে যেতে পারে না । এইজন্য প্রতিদিনই প্রার্থনা করি, নমস্তেহস্তু | তোমাতে আমার নমস্কার হােক। সুখ আসুক দুঃখ আসুক, নমস্তেহস্তু। মান আসুক অপমান আসুক, নমস্তেহস্তু । তুমি শিক্ষা দিচ্ছ এই জেনে— নমস্তেহস্তু। তুমি রক্ষা করছি এই জেনে— নমস্তেহস্তু। তুমি নিত্য নিয়তই আমার কাছে আছ। এই জেনে- নমস্তেহস্তু । তোমার গৌরবেই আমার একমাত্র গৌরব এই জেনেই নমস্তেহস্তু। অখণ্ড ব্ৰহ্মাণ্ডের অনন্ত কালের অধীশ্বর তুমিই পিতা নোহসি এই জেনেই— নমস্তেহস্তু নমস্তেহস্তু। বিষয়কেই আশ্রয় বলে জানা ঘুচিয়ে দাও, নমস্তেহস্তু। সংসারকে প্রবল বলে জানা ঘুচিয়ে দাও, নমস্তেহস্তু। আমাকেই বড়ো বলে জানা ঘুচিয়ে দাও, নমস্তেহস্তু। তোমাকেই যথার্থরাপে নমস্কার করে চিরদিনের মতো পরিত্রাণ লাভ করি । २७ b মন্ত্রের বাধন বীণার কোনাে তার পিতলের, কোনাে তার ইস্পাতের, কোনাে তার মােটা, কোনাে তার সরু, কোনাে তার মধ্যম সুরে বঁাধবার, কোনো তার পঞ্চমে । কিন্তু তবু বঁধতে হবে, তার থেকে একটা কোনো বিশুদ্ধ সুর জাগিয়ে তুলতে হবে, নইলে সব মাটি । r জগতে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের কোনো বিশেষ আপন সম্বন্ধ স্থাপন করতে হবে । একটা কোনো বিশেষ সুর বাজাতে হবে। 8