পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\ტ\ტხr রবীন্দ্র-রচনাবলী সূর্য চন্দ্র তারা ওষধি বনস্পতি সকলেই এই বিশাল বিশ্বসংগীতে নিজের একটানা-একটা বিশেষ সুর যোগ করে দিয়েছে। মানুষের জীবনকেও কি এই চির-উদগীত সংগীতে যোগ দিতে হবে না ? কিন্তু এখনো এই জীবনটাকে তারের মতো বাধি নি। এর মধ্যে এখনো কোনো গানের আবির্ভাব হয় নি। এ জীবন সূত্রবিচ্ছিন্ন বিচিত্র তুচ্ছতার মধ্যে অকৃতাৰ্থ হয়ে আছে। যেমন করেই পারি এর একটি কোনাে নিত্য সুরকে ধ্রুব করে তুলতে হবে। তারকে বাধিব কেমন করে ? ঈশ্বরের বীণায় অনেকগুলি বীধবার সম্বন্ধ আছে, তার মধ্যে নিজের মনের মতো একটি-কিছু স্থির করে নিতে হবে। মন্ত্র জিনিসটি একটি বাধিবার উপায় । মন্ত্রকে অবলম্বন করে আমরা মননের বিষয়কে মনের সঙ্গে বেঁধে রাখি। এ যেন বীণার কানের মতো। তারকে ঐটে রাখে, খুলে পড়তে দেয় না। বিবাহের সময় স্ত্রীপুরুষের কাপড়ে কাপড়ে গ্ৰন্থি বেঁধে দেয়, সেইসঙ্গে মন্ত্র পড়ে দেয়। সেই মন্ত্র মনের মধ্যেও গ্ৰন্থি বাধতে থাকে । ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের যে গ্ৰন্থিবন্ধনের প্রয়োজন আছে মন্ত্র তার সহায়তা করে । এই মন্ত্রকে অবলম্বন করে আমরা তার সঙ্গে একটা কোনো বিশেষ সম্বন্ধকে পাকা করে নেব । সেইরূপ একটি মন্ত্র হচ্ছে- পিতা নোহসি | এই সুরে জীবনটাকে বাধলে সমস্ত চিন্তায় ও কর্মে একটি বিশেষ রাগিণী জেগে উঠবে। আমি তীর পুত্ৰ এইটেই মূর্তি ধরে আমার সমস্তের মধ্যেই এই কথাটাই প্রকাশ করবে যে, আমি তীর পুত্র। আজ আমি কিছুই প্রকাশ করছি নে। আহার করছি, কাজ করছি, বিশ্রাম করছি, এই পর্যন্তই। কিন্তু অনন্ত কালে অনন্ত জগতে আমার পিতা যে আছেন তার কোনাে লক্ষণই প্রকাশ পাচ্ছে না। অনন্তের সঙ্গে আজও আমার কোনো গ্ৰন্থি কোথাও বাধা হয় নি । * ঐ মন্ত্রটিকে দিয়ে জীবনের তার আজ বাঁধা যাক। আহারে বিহারে শয়নে স্বপনে ঐ মন্ত্রটি বারংবার আমার মনের মধ্যে বাজতে থাক : পিতা নোহসি । জগতে আমার পিতা আছেন এই কথাটি সকলে জানুক, কারও কাছে গোপন না থাক । ভগবান যিশু ঐ সুরটিকে পৃথিবীতে বাজিয়ে গিয়েছেন। এমনি ঠিক করে তার জীবনের তার বাধা ছিল যে মরণান্তিক যন্ত্রণার দুঃসহ আঘাতেও সেই তার লেশমাত্র বেসুর বলে নি— সে কেবলই বলেছে ; পিতা নোহসি | সেই যে সুরের আদর্শটি তিনি দেখিয়ে গেছেন সেই খাটি আদর্শের সঙ্গে একান্ত যত্নে মিশিয়ে তারটি বাঁধতে হবে, যাতে আর ভাবতে না হয়, যাতে সুখে দুঃখে প্রলোভনে আপনিই সে গেয়ে ওঠে পিতা নোহসি । হে পিতা, আমি যে তোমার পুত্র এই সুরটি ঠিকমত প্রকাশ করা বড়ো কম কথা নয়। কেননা, আত্মা বৈ জায়তে পুত্রঃ । পুত্র যে পিতারই প্রকাশ। সন্তানের মধ্যে পিতাই যে স্বয়ং সন্তত হন। তোমারই অপাপবিদ্ধ আনন্দময় পরিপূর্ণতাকে যদি ব্যক্ত করে না তুলতে পারি। তবে তো এই সুর বাজবে না যে ; পিতা নোহসি | সেইজন্যেই এই আমার প্রতিদিনের একান্ত প্রার্থনা হােক : পিতা নো বোধি, নমস্তেহস্তু। So Čbé