পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৬৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

༦ཤ༦ রবীন্দ্র রচনাবলী আজ বর্ষশেষ আমাদের জীবনকে কি তীর সেই ক্ষমার দ্বারে এনে উপনীত করবে না ? যার উপরে মরণের সীলমোহর দেওয়া আছে, যা যাবার জিনিস, তাকে কি আজও আমরা যেতে দেব না। বছর ভরে যে-সব পাপের আবর্জনা সঞ্চয় করেছি, আজ বৎসরকে বিদায় দেবার সময় কি তার কিছুই বিদায় দিতে পারব না ? ক্ষমা করে ক্ষমা নিয়ে নির্মল হয়ে নব বৎসরে প্রবেশ করতে পাব না ? আজ আমার মুষ্টি শিথিল হােক। কেবল কাড়ব এবং কেবল মারব এই করে কোনো সুখ কোনাে সার্থকতা পাই নি । যিনি সমস্ত গ্রহণ করেন আজ তার সম্মুখে এসে, ছাড়ব এবং মরব। এই কথাটা আমার মন বলুক। আজ তীর মধ্যে সম্পূর্ণ ছাড়তে সম্পূর্ণ মরতে এক মুহুর্তে পারব না ; তবু ঐ দিকেই মন নত হােক, নিজেকে দেবার দিকেই তার অঞ্জলি প্রসারিত করুক, সূর্যাস্তের সুরেই বাঁশি বাজতে থাক, মৃত্যুর মােহন রাগিণীতেই প্রাণ কেঁদে উঠুক। নববর্ষের ভারগ্রহণের পূর্বে আজ সন্ধ্যাবেলায় সেই সর্বভারমোচনের সমুদ্রতটে সকল বােঝাই নামিয়ে দিয়ে আত্মসমর্পণের মধ্যে অবগাহন করি ; নিস্তরঙ্গ নীল জলরাশির মধ্যে শীতল হই; বৎসরের অবসানকে অন্তরের মধ্যে পূর্ণভাবে গ্রহণ করে স্তব্ধ হই, শান্ত হই, পবিত্ৰ হই । bé) צס অনন্তের ইচ্ছা! আমার শরীরের মধ্যে কতকগুলি ইচ্ছা আছে যা আমার শরীরের গোচর । যেমন আমার খেতে ইচ্ছা! করে, স্নান করতে ইচ্ছা করে, শীতের সময় গরম হতে ইচ্ছা করে | কিন্তু সমস্ত শরীরের মধ্যে একটি ইচ্ছা আছে যা আমার অগোচরেই আছে। সেটি হচ্ছে স্বাস্থ্যের ইচ্ছা, সে আমাকে খবর না জানিয়েই রোগে এবং অরোগে নিয়ত কাজ করছে । সে ব্যাধির সময় কতরকম প্ৰতিকারের আশ্চর্য ব্যবস্থা করছে তা আমরা জানিই নে এবং অরোগের সময় সমস্ত শরীরের মধ্যে বিচিত্র ক্রিয়ার সামঞ্জস্য-স্থাপনার জন্যে তার কৌশলের অন্ত নেই, তারও কোনো খবর সে আমাদের জানায় না । এই স্বাস্থ্যের ইচ্ছাটি শরীরের মূলে আমাদের চেতনার অগোচরে রাত্ৰিদিন নিদ্রায় জাগরণে অবিশ্রাম বিরাজ করছে । শরীর সম্বন্ধে যে ব্যক্তি জ্ঞানী। তিনি এইটিকেই জানেন । তিনি জানেন আমাদের মধ্যে একটি স্বাস্থ্যতত্ত্ব আছে। শরীরের এই মূল অব্যক্ত ইচ্ছাটিকে যিনি জেনেছেন তিনি শরীরগত সমস্ত ব্যক্তি ইচ্ছাকে এর অনুগত করে তোলেন। ব্যক্তি ইচ্ছা যখন খাব বলে আবদার করছে তখন তাকে তিনি এই অব্যক্ত স্বাস্থ্যের ইচ্ছারই শাসনে নিয়মিত করবার চেষ্টা করেন । শরীর সম্বন্ধে এইটেই হচ্ছে সাধনা ৷ পাঁচজনের সঙ্গে মিলে আমরা যে একটা সামাজিক শরীর রচনা করে আছি, তার মধ্যেও ব্যক্ত এবং অব্যক্ত ইচ্ছা আছে। সমাজের প্রত্যেকের নিজের স্বাৰ্থ সুবিধা সুখ ও স্বাধীনতার জন্যে যে ইচ্ছা! এইটেই তার ব্যক্ত ইচ্ছা। সকলেই বেশি পেতে চাচ্ছে, সকলেই জিততে চাচ্ছে, যত কম মূল্য দিয়ে } যত বেশি পরিমাণ আদায় করতে পারে এই সকলের ইচ্ছা । এই ইচ্ছার সংঘাতে কত ফাকি, কত যুদ্ধ, { কত দলাদলি চলছে তার আর সীমা নেই। ܚܫ s কিন্তু এরই মধ্যে একটি অব্যক্ত ইচ্ছা ধ্রুব হয়ে আছে। র্ত্যকে প্রত্যক্ষ দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সে আছেই, না থাকলে কোনোমতেই সমাজ রক্ষা পেত না- সে হচ্ছে মঙ্গলের ইচ্ছা । অর্থাৎ সমস্ত সমাজের সুখ হােক, ভালো হােক এই ইচ্ছা প্রত্যেকের মধ্যে নিগৃঢ়ভাবেই আছে। এই থাকার উপরেই সমাজ বেঁধে উঠেছে, কোনো প্রত্যক্ষ সুবিধার উপরে নয়। সমাজ সম্বন্ধে যারা জ্ঞানী তীরা এইটেই জেনেছেন। তঁরা সমুদয় সুখ সুবিধা স্বাধীনতার বাত্ত