পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

\bԳԵr রবীন্দ্র-রচনাবলী 9NG: G N-96 সেই পাওয়াতেই মানুষের মন আনন্দিত যে পাওয়ার সঙ্গে না-পাওয়া জড়িত হয়ে আছে। যে-সুখ কেবলমাত্র পাওয়ার দ্বারাই আমাদের উন্মত্ত করে তোলে না— অনেকখানি না-পাওয়ার মধ্যে যার স্থিতি আছে বলেই যার ওজন ঠিক আছে, সেইজন্যেই যাকে আমরা গভীর সুখ বলিঅর্থাৎ যে-সুখের সকল অংশই একেবারে সুস্পষ্ট সুব্যক্ত নয়, যার এক অংশ নিগুঢ়তার মধ্যে অগোচর, যা প্রকাশের মধ্যেই নিঃশেষিত নয়, তাকেই আমরা উচ্চ শ্রেণীর সুখ বলি । পেট ভরে আহার করলে পর আহার করবার সুখটা সম্পূর্ণ পাওয়া যায়, দর্শনে স্পর্শনে ঘাণে স্বাদে সর্বপ্রকারে তাকে সম্পূর্ণ আয়ত্ত করা হয়। সে-সুখের প্রতি যতই লোভ থাকুক, মানুষ তাকে আনন্দের কোঠায় ফেলে না । কিন্তু যে-সৌন্দর্যবোধকে আমরা কেবলমাত্র ইন্দ্ৰিয়বোধের দ্বারা সেরে ফেলতে পারি নে— যা বীণার অনুরণনের মতো চেতনার মধ্যে স্পন্দিত হতে থাকে, যা সমাপ্ত হতেই চায় না, সে-আনন্দকে আমরা আহারের আনন্দের সঙ্গে এক শ্রেণীতে গণ্যই করি নে। কেবলমাত্র পাওয়া তাকে অপমানিত করে না, না-পাওয়া তাকে গৌরব দান করে । আমরা জগতে পাওয়ার মতো পাওয়া তাকেই বলি যে-পাওয়ার মধ্যে অনির্বচনীয়তা আছে। যে-জ্ঞান কেবলমাত্র একটি খবর তার মূল্য অতি অল্প, কেননা সেটা একটা সংকীর্ণ জানার মধ্যেই ফুরিয়ে যায়। কিন্তু যে জ্ঞান তথ্য নয়, তত্ত্ব, অর্থাৎ যাকে কেবল একটি ঘটনার মধ্যে নিঃশেষ করা যায় না, যা অসংখ্য অতীত ঘটনার মধ্যেও আছে এবং যা অসংখ্য ভাবী ঘটনার মধ্যেও আপনাকে প্রকাশ করবে, যা কেবল ঘটনা-বিশেষের মধ্যে ব্যক্ত বটে কিন্তু অনন্তের মধ্যে অব্যক্তরূপে বিরাজমান, সেই জ্ঞানেই আমাদের আনন্দ । কেবলমাত্র বিচ্ছিন্ন তুচ্ছ খবরে নিতান্ত জড়বুদ্ধি অলস লোকের বিলাস | ক্ষণিক আমোদ বা ক্ষণিক প্রয়োজনে আমরা অনেক লোকের সঙ্গে মিলি, আমাদের কাছে তারা সেইটুকুর মধ্যেই নিঃশেষিত। কিন্তু যে আমার প্রিয়, কোনো-এক সময়ের আলাপে আমোদে, কোনো-এক সময়ের প্রয়োজনে তার শেষ পাই নে। তার সঙ্গে যে সময়ে যে আলাপে যে কর্মে নিযুক্ত আছি, সে সময়কে সেই আলাপকে সেই কর্মকে বহুদূরে ছাড়িয়ে সে রয়েছে। কোনো বিশেষ দেশে বিশেষ কালে বিশেষ ঘটনায় আমরা তাকে সমাপ্ত করলুম বলে মনেই করতে পারি নে, সে আমার কাছে প্ৰাপ্ত অথচ অপ্ৰাপ্ত, এই অপ্ৰাপ্তি তাকে আমার কাছে এমন আনন্দময় করে রেখেছে। এর থেকে বোঝা যায় আমাদের আত্মা যে পেতেই চাচ্ছে তা নয়, সে না পেতেও চায় । এইজনেই সংসারের সমস্ত দৃশ্যম্পূশ্যের মাঝখানে দাঁড়িয়ে সে বলছে কেবলই পেয়ে পেয়ে আমি শ্ৰান্ত হয়ে গেলুম, আমার না-পাওয়ার ধন কোথায় ? সেই চিরদিনের না-পাওয়াকে পেলে যে আমি বঁচি | যতোবাচো নিবর্তন্তে অপ্ৰাপ্য মনসা সহ আনন্দং ব্ৰহ্মণো বিদ্বানান বিভৌতি কদাচন। বাক্য মন র্যাকে না পেয়ে ফিরে আসে সেই আমার না-পাওয়া ব্ৰহ্মের আনন্দে আমি সমস্ত ক্ষুদ্র ভয় হতে যে (? ? এইজন্যেই উপনিষৎ বলেছেন, অবিজ্ঞাতম বিজানতাং বিজ্ঞাতম আবিজানতাম, যিনি বলেন “আমি তাকে জানি নি। তিনিই জানেন, যিনি বলেন “আমি জেনেছি। তিনি জানেন না । আমি তাকে জানতে পারলুম না। এ কথাটা জািনবার অপেক্ষা আছে। পাখি। যেমন করে জানে আমি আকাশ পার হতে পারলুম না তেমনি করে জানা চাই, পাখি আকাশকে জানে বলেই সে জানে যে আকাশ পার হওয়া গেল না। আকাশ পার হওয়া গেল না জানে বলেই তার আনন্দ, এইজন্যেই সে আকাশে উড়ে বেড়ায় । কোনো প্ৰাপ্তি নয়, কেনো সমাপ্তি নয়, কোনো প্রয়োজন নয়, কিন্তু উড়েই তার उन्न । পাখি আকাশকে জানে বলেই সে জানে আমি আকাশকে শেষ করে জানলুম না এবং এই জেনে