পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

१२br রবীন্দ্র-রচনাবলী পবিত্র ধূলিকে মাথায় নিয়ে, হে সর্বব্যাপী পরমানন্দ, তোমাকে সর্বত্র স্বীকার করবার শক্তি আমাদের মধ্যে সঞ্চারিত হােক। যাক সমস্ত বাধাবন্ধ ভেঙে যাক। দেশের মধ্যে এই আনন্দবোধের বন্যা এসে পড়ক। সেই আনন্দের বেগে মানুষের সমস্ত ঘরগড়া ব্যবধান চূর্ণ হয়ে যাক, শত্ৰু মিত্র মিলে যাক, স্বদেশ বিদেশ এক হােক। হে আনন্দময়, আমরা দীন নাই দরিদ্র নই। তোমার অমৃতময় অনুভূতিদ্বারা আমরা আকাশে এবং আত্মীয়- অন্তরে বাহিরে পরিবেষ্টিত— এই অনুভূতি আমাদের দিনে দিনে জাগ্রত হয়ে উঠুক। তা হলেই আমাদের ত্যাগই ভোগ হবে, অভাবও ঐশ্বৰ্যময় হবে, দিন পূর্ণ হবে, রাত পূর্ণ হবে, নিকট পূর্ণ হবে, দূর পূর্ণ হবে, পৃথিবীর ধূলি পূর্ণ হবে, আকাশের নক্ষত্ৰলোক পূর্ণ হবে। র্যােরা তোমাকে নিখিল আকাশে পরিপূর্ণভাবে দেখেছেন তারা তো কেবল তোমাকে জ্ঞানময় বলে দেখেন নি। কোন প্রেমের সুগন্ধ বসন্তবাতাসে তাদের হৃদয়ের মধ্যে এই বার্তা সঞ্চারিত করেছে যে, তোমার যে বিশ্বব্যাপী অনুভূতি তা রসময় অনুভূতি। বলেছেন 'রসো বৈ সঃ- সেইজনেই জগৎ DBD TBL BDBDS DBDB DDSLDL KBS LLLBL KBS BBD KOS DBD SDDDS DDDL SBBBBLSS এতস্যৈবানন্দ স্যান্যানিভূতানি মাত্রামুপজীবন্তি। তোমার এই অখণ্ড পরমানন্দ রসকেই আমরা সমস্ত জীবজন্তু দিকে দিকে মুহূর্তে মুহূর্তে মাত্রায় মাত্রায় কণায় কণায় পাচ্ছি।— দিনে রাত্রে, ঋতুতে ঋতুতে, অন্নে জলে, ফুলে ফলে, দেহে মনে, অন্তরে বাহিরে বিচিত্র করে ভোগ করছি। হে অনির্বচনীয় অনন্ত, তোমাকে রসময় বলে দেখলে সমস্ত চিত্ত একেবারে সকলের নীচে নত হয়ে পড়ে। বলে— দাও দাও, আমাকে তোমার ধুলার মধ্যে তৃণের মধ্যে ছড়িয়ে দাও । দাও আমাকে রিক্ত করে কাঙািল করে, তার পরে দাও আমাকে রসে ভরে দাও। চাই না। ধন, চাই না মান, চাই না। কারও চেয়ে কিছুমাত্র বড়ো হতে। তোমার যে রস হাটবাজারে কেনবার নয়, রাজভাণ্ডারে কুলুপ দিয়ে রাখবার নয়, যা আপনার অন্তহীন প্রাচুর্যে আপনাকে আর ধরে রাখতে পারছে না, চারদিকে ছড়াছড়ি যাচ্ছে— তোমার যে রসে মাটির উপর ঘাস সবুজ হয়ে আছে, বনের মধ্যে ফুল সুন্দর হয়ে আছে— যে রসে সকল দুঃখ সকল বিরোধ সকল কড়াকড়ির মধ্যেও আজও মানুষের ঘরে ঘরে ভালোবাসার অজস্র অমৃতধারা কিছুতেই শুকিয়ে যাচ্ছে না, ফুরিয়ে যাচ্ছে না— মুহূর্তে মুহুর্তে নবীন হয়ে উঠে পিতায়-মাতায় স্বামী-স্ত্রীতে পুত্ৰে-কন্যায় বন্ধু-বান্ধবে নানা দিকে নানা শাখায় বয়ে যাচ্ছে- সেই তোমার নিখিল রসের নিবিড় সমষ্টিরূপ যে অমৃত তারই একটু কণা আমার হৃদয়ের মাঝখানটিতে একবার ছুইয়ে দাও। তার পর থেকে আমি দিনরাত্রি তোমার সবুজ ঘাসপাতার সঙ্গে আমার প্রাণকে সরস করে মিলিয়ে দিয়ে তোমার পায়ের সঙ্গে সংলগ্ন হয়ে থাকি । যারা তোমারই, সেই তোমার-সকলের মাঝখানেই গরিব হয়ে, নিশ্চিন্ত হয়ে, খুশি হয়ে, যে জায়গাটিতে কারও লোভ নেই সেইখানে প্রতিষ্ঠিত হয়ে তোমার প্ৰেমমুখশ্ৰীর চিরপ্রসন্ন আলোকে পরিপূর্ণ হয়ে থাকি। হে প্ৰভু, কবে তুমি আমাকে সম্পূর্ণ করে সত্য করে জানিয়ে দেবে যে, রিক্ততার প্রার্থনাই তোমার কাছে চরম প্রার্থনা। আমার সমস্তই নাও, সমস্তই ঘুচিয়ে দাও, তা হলেই তোমার সমস্তই পাব।— মানবজীবনে সকলের এই শেষ কথাটি ততক্ষণ বলবার সাহস হবে না। যতক্ষণ অন্তরের ভিতর থেকে বলতে না পারব; রসো বৈ সঃ, রসং হােবায়ং লবধ্বানন্দী ভবতি : তিনিই রস, যা-কিছু আনন্দ সে এই রসকে পেয়েই। शशर्षऊन ; কলিকাতা মাঘোৎসব ১৩১৬)