পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* ৰঙ্গবিজেতা কর, আমার হৃদয়ে যে কট হইতেছে, তাহা তুমি জান না, আমার হৃদয় বিদীণ হইতেছে। শকুনি, আমায় ক্ষমা কর। শকুনি। বিবাহের আগে সকল বালিকাই ঐরপে বলে, শ্বশরে-বাড়ী যাইবার সময় সকলেই কাঁদে, কিন্তু একবার গেলে আর বাপের বাড়ীতে আসিতে চাহে না। বিমলা। শকুনি, উপহাস করিও না, আমি হৃদয়ে মৰ্ম্মণস্তিক বেদনা পাইতেছি, উপহাস ভাল লাগে না । শকুনি। আমি উপহাস করিতে আইসি নাই। তুমি যে প্রতিজ্ঞা করিয়াছ, তাহা পালন করিতে সক্ষমত আছ কি না ? বিমলা। অামি কোন প্রতিজ্ঞা করি নাই। শকুনি। প্রতিজ্ঞা না করিয়া থাক, আমাকে বিবাহ করিতে সম্মত আছ কি না ? বিমলা । জীবন থাকিতে সক্ষমত হইব না। শকুনি। আর আমার দোষ নাই, এক্ষণে বলপ্রকাশ ভিন্ন আর উপায় নাই। বিমলা। আমার পিতা থাকিলে তুমি এরুপ কথা বলিতে পারিতে না। পিতার অবত্তমানে, রক্ষাকত্তার অবত্তমানে, নিরাশ্রয় অবলার উপর অত্যাচার করা ব্ৰাহ্মণের ধৰ্ম্ম নহে। শকুনি। আমি বালিকার নিকট ব্রাহ্মণের ধৰ্ম্মম শিখিতে আইসি নাই। বিমলা। তথাপি আমার কথা অবধারণ কর। দেখ, আমার পিতা তোমাকে কত অনুগ্রহ করেন, তোমাকে দরিদ্রাবস্থা হইতে পাত্রের মতন লালনপালন করিয়াছেন, তোমাকে অদ্যাপি পত্রের মতন যত্ন করেন । তাঁহার কন্যার প্রতি অত্যাচার করা তোমার বিধেয় নহে। শকুনি আপনার পবেকার দরিদ্রাবস্থার কথা শ্রবণে ক্রুদ্ধ হইয়া বলিলেন,—তোমার পিতা সহস্ৰ পাপ করিয়াও যে আজ পয্যন্ত জীবিত রহিয়াছেন, সে আমার অনগ্রহে। পিতার নিন্দাবাদে বিমলা আর ক্রোধ সম্ববরণ করিতে পারলেন না, আরক্ত নয়নে কহিলেন, --তুমিই আমার পিতার সব্বনাশ করিয়াছ, তুমিই আবার তাঁহাকে তিরস্কার কর ? কুক্ষণে ভূত্যের বেশে এই দগে আসিয়াছিলে, এক্ষণে প্রভু হইতে চাহ ? ভূত্যের সহিত বিবাহে বিমলা কখনও সম্মত হইবে না। শকুনি। কাহার সম্মুখে এরুপ কথা কহিতেছ জান ? তোমার জীবন মরণ, তোমার পিতার মরণ আমার হস্তে তাহা জান ? বিমলা। জানি,—সতীশচন্দ্রের কন্যা সতীশচন্দ্রের ভূত্যের সহিত কথা কহিতেছে, সে দিন যে নিরাশ্রয় ব্রাহ্মণপত্র অন্নের জন্য পিতার নিকট আশ্রয় লইয়াছে, তাহারই সহিত আমি কথা কহিতেছি। க் বিমলা স্বভাবতঃ মানিনী, পিতার নিন্দা-কথা শুনিয়া তাঁহার ক্রোধানল জনলিয়া উঠিয়াছিল, তাঁহার নয়নদ্বয় জনলিতেছিল, আললোয়িত কেশ কপোলে ও উন্নত বক্ষঃস্থলের উপর পড়াতে তাঁহাকে উন্মত্তের ন্যায় দেখাইতেছিল। সে অপরাপ আকৃতি দেখিয়া শকুনিও কিঞ্চিৎ ভীত হইলেন ও ক্ষণেক নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন, মহোত্তমধ্যে বিমলা ক্রোধ সম্বরণ করিয়া ধীরে ধীরে আমার মিথ্যা রাগ, শকুনি, আমি জানি আমি সম্পণেরপে তোমার অধীনে আছি। তোমাকে যে ভৎসনা করিলাম সে কেবল ক্রোধে অন্ধ হইয়া। পিতৃনিন্দা আমি সহ্য করতে পারি না, আমার নিকট পিতার নিন্দা করিও না। শকুনি। আমি তোমার পিতার নিন্দা করিতে আইসি নাই: তোমার পিতা আমার প্রতি যে দয়া করিয়াছেন তাহা আমি বিস্মত হই নাই। এক্ষণে যাহার জন্য আসিয়াছি তাহার উত্তর কি ? বিমলা। আমি জীবন থাকিতে তোমাকে বিবাহ করিতে পারিব না। শকুনি। বিমলা, তুমি অতি বৃদ্ধিমতী। আমার হৃদয়ে দয়া, ক্রোধ, দুঃখ প্রভৃতি নানারপ পারিবে না। আমি যে কমে যখন দৃঢ়ব্ৰত হইয়াছি, জগৎসংসারে কোন লোকই আমাকে তাহা হইতে নিরস্ত রাখিতে পারে নাই। তুমি বালিকা হইয়া যে এত দিন আমাকে এই বিবাহ হইতে নিরস্ত রাখিয়াছ, তাহাতে তোমার বৃদ্ধি ও দঢ় প্রতিজ্ঞার যথেস্ট প্রশংসা করিতেছি, কিন্তু আর পরিবে না। অদ্যই তোমার সহিত আমার বিবাহ হইবে, সকল আয়োজনই প্রস্তুত আছে। তুমি & Ꮌ