পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রমেশ রচনাবলী সতীশচন্দ্র তৎক্ষণাৎ আপনার পরাতন ভূতাকে চিনিলেন, বলিলেন,-নরাধম! তোকে কে এরপে প্রভুভক্তি শিখাইয়াছিল ? o - , , ம் ভূত্য অতি ক্ষীণ ও পখলিতস্বরে উত্তর করিল,—পাপিষ্ঠ শকুনি। সতীশচন্দ্র তখন ক্রোধে অধীর হইয়া বলিলেন,-আমিও ভাবিয়াছিলাম সেই পামরেরই এই কাৰ্য্য। পৃথিবীতে তাহার মত ভীষণ পাপী আর নাই। কিন্তু তুই আমার পরাতন ভূত্য হইয়া তুই আমার বধের সঙ্কল্প P ভূত্য আরও ক্ষীণস্বরে উত্তর করিল,—শ–শ–শকুনি অনেক লোভ দেখাইয়াছিল, লোভে পড়িলে জ্ঞান থাকে না, লোভে পড়িয়া পাপ করিলাম, প্রাণ হারাইলাম। আর কথা বাহির হইল না; শরীর হইতে প্রাণ বহিগত হইল, ওঁঠস্বয় কাঁপিতে কাঁপিতে স্থির হইল, নয়ন দুইটী আকাশের দিকে চাহিয়া রহিল। চন্দ্রালোকে মতদেহের দিকে চাহিয়া সতীশচন্দ্র বলিলেন,—ভূত্য, তোর অপেক্ষা জ্ঞানী লোকও লোভে পড়িয়া জ্ঞান হারাইয়াছে, তোর অপেক্ষা ভীষণ পাপ করিয়াছে, তোর মত প্রাণ হারাইবারও বিলম্বব নাই। পরমেশ্বর তোকে ক্ষমা করন, আমার পাপের ক্ষমা নাই। প্রাতঃকালে রাজার নিকট সংবাদ আসিল, দেওয়ানজী সতীশচন্দ্র মৃত্যুশয্যায় শয়ন করিয়া রহিয়াছেন। রাজা তৎক্ষণাৎ সতীশচন্দ্রের গহে গমন করিলেন, ইন্দ্রনাথ সঙ্গে সঙ্গে । চলিলেন । বসিয়া রহিয়াছে, কিন্তু যে ভীষণ বিষ শরীরে প্রবেশ করিয়াছে, তাহাতে পরিত্রাণ নাই। রাজা এই অদ্ভুত ঘটনার কারণ জিজ্ঞাসা করিলেন, পাশ্বাস্থ অনচেরগণ সবিশেষ অবগত করাইল। তখন সতীশচন্দ্র অতি ক্ষীণস্বরে বলিতে লাগিলেন,—মহারাজ ! আমি পাপী, পাপিষ্ঠকে ক্ষমা করন। রাজা নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। সতীশচন্দ্র পুনরায় বলিলেন,—আমি ভীষণ দোষ করিয়াছি, সে অপরাধ ক্ষমা করন। রাজা তথাপি নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। সতীশচন্দ্র পুনরায় বলিলেন,-মহারাজ ! আমি নরহত্যাকারী: কিন্তু সকল অপরাধেরই ক্ষমা আছে; আমাকে ক্ষমা করনে। আমি নরহত্যাকারী: মৃত্যুশয্যায় ক্ষমা প্রার্থনা করিতেছি, আমাকে ক্ষমা করন । সে কাতরস্বর শ্রবণ করিয়া রাজা আর সম্ববরণ করিতে পারিলেন না, বলিলেন,—রাজা সমরসিংহের হত্যাকারীকে আমি কখনও ক্ষমা করিব ভাবি নাই। কিন্তু জগদীশ্বর তোমাকে শাস্তি দিয়াছেন, আমি তোমাকে ক্ষমা করিলাম। তোমার জীবিত থাকিবার আর অধিক কাল নাই, ভগবানের নাম গ্রহণ কর, তিনি দয়ার সাগর, মৃত্যুকালে তাঁহার পবিত্র নাম উচ্চারণ করিলে জীবনের পাপ খণ্ডন হয়। চকিত হইয়া সতীশচন্দ্র আবার রাজাকে লক্ষ্য করিয়া বলিলেন,—মহারাজ ! তবে আপনি সমরসিংহের মৃত্যুর কারণ সবিশেষ অবগত আছেন ? রাজা উত্তর করিলেন,—আছি। সতীশচন্দ্র বিস্মিত হইলেন, নিস্তব্ধ হইয়া রহিলেন। অনেকক্ষণ পর আবার বলিলেন,—মহারাজ ! আমার একটী নিবেদন আছে। আমি পাপী বটে, কিন্তু জন্মাবধি পাপী ছিলাম না, যৌবনে আমার জীবন পবিত্র ছিল, উচ্চ মতি, উচ্চ আশা, উচ্চ প্রবত্তি ছিল। লোভে, মহালোভে পড়িয়া সে সকল হারাইয়াছি, জীবন পাপে কলুষিত হইল, আজি প্রাণ হারাইলাম— সতীশচন্দ্রের ক্ষীণস্বর অধিকতর ক্ষীণ হইয়া আসিল, আর কথা নিঃসত হইল না। রাজা সস্নেহে ওঠে দহ্ম দিলেন, রসশন ওষ্ঠ পনরায় সিক্ত হইল। সতীশচন্দ্র পনরায় বলিতে লাগিলেন--আমি পাপী বটে, কিন্তু আমার অপেক্ষাও ঘোরতর পাপী আছে। মহারাজ ! আমার ভৃত্য শকুনিই যথার্থ সমরসিংহকে বধ করিয়াছে, সেই অদ্য আমাকে বধ করিল, আপনি তাহার বিচার কারবেন। ক্রোধে রাজা টোডরমল্পের নয়নস্বয় রক্তবর্ণ হইল। কিন্তু তিনি ক্ৰোধ সম্বরণ করিয়া ধীরে ধীরে বলিলেন,—চিন্তা নাই, জগদীশ্বর পাপীর দণ্ড দিবেন। 擊 আবার অনেকক্ষণ পৰ্য্যস্ত সকলে নীরব হইয়া রহিল। সতীশচন্দ্রের আয় নিঃশেষিত 4