পাতা:রমেশ রচনাবলী (উপন্যাস).djvu/১১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y অনিমেষলোচনে সেই বহুপবেদষ্ট বদনমণ্ডলের দিকে বার বার নিরীক্ষণ করিতে লাগিলেন। সেই সন্দের ললাট, সেই নিবিড় কৃষ্ণ ভ্ৰষগল, সেই স্নেহপরিপািণ চিন্তা-প্রকাশক নয়ন, সেই মধরে ওঠে, ও সেই নিবিড় কৃষ্ণ কেশরাশি, সেই উন্নত হৃদয় ও সসৌষ্ঠব বাহযোিগল। উপেন্দ্র দেখিতে দেখিতে পাগলের ন্যায় হইয়া সেই হৃদয়ের প্রতিমাকে চুবন করিতে লাগিলেন। জগতের মধ্যে ভাগ্যবতী কমলা দেবতুল্য পতিকে পাইলেন, তাঁহার পুলকিত শরীর স্বামীর আলিঙ্গনে বদ্ধ, স্বামীর ওঠে তাঁহার ওঠে, স্বামীর হৃদয়ে তাঁহার হৃদয়! অনেকক্ষণ পরে উপেন্দ্র বলিলেন,—নিকুঞ্জবাসিনী কমলা! আমার নৌকা মগ্ন হইবার পর আমি পরিত্রাণ পাইয়াছিলাম, কিন্তু তোমাকে আর পাইব, আমার আশা ছিল না। গ্রামে ফিরিয়া আসিলে গ্রামের লোকে আমাকে বলিয়াছিল, পীড়ায় তোমার কাল হইয়াছে। কমলা বলিলেন-হৃদরেশ্বর ! তোমার মৃত্যু-সংবাদ পাইয়া আমার সঙ্কট পীড়া হইয়াছিল, কিন্তু অনেক দিন পরে নিস্তার পাইয়াছিলাম। যখন নিস্তার পাইলাম তখন আমি বনগ্রামের আশ্রমে । উপেন্দ্র। জগদীশ্বর আমাকে রক্ষা করিয়াছেন, তাঁহার পবিত্র নাম গ্রহণ কর। এক্ষণে আইস, তোমাকে তোমার শ্বশরালয়ে লইয়া যাই। কমলা। আমার শ্বশরালয় কোথায় ? উপেন্দ্রনাথ কমলাকে লইয়া জমীদার নগেন্দ্রনাথের আলয়ে উপস্থিত হইলেন। সমস্ত কথা যখন প্রকাশিত হইল, তখন জমীদার গহে যে হলস্থলে পড়িয়া গেল, তাহা বর্ণনা করিতে আমরা অক্ষম। জমীদারের জ্যেষ্ঠপত্রের বহুদিন পবে কাল হইয়াছে বলিয়া সকলেই স্থির করিয়াছিল; সেই জ্যেষ্ঠ পত্র আজি গহে ফিরিয়া আসিলেন, লক্ষীস্বরপো পত্রেবধ গহ আলো করিলেন, এ সকল কথা জমীদার গহ হইতে সমস্ত গ্রামে, গ্রাম হইতে সমস্ত দেশে প্রচার হইল। ইচ্ছাপুর নগর জয়ঢাকের নাদে পরিপণ হইল, প্রাসাদ ও পর্ণকুটীর পতাকায় শোভিত হইল, দিবানিশি লোকের আনন্দ-শব্দে শদিত হইল । বদ্ধ নগেন্দ্রনাথ বার বার জ্যেষ্ঠ পত্রকে আলিঙ্গন করিয়া আশ্রজেল বিসঙ্গজন করিতে লাগিলেন, কন্যাতুল্যা কমলাকে পত্রবধ জানিয়া যার-পর-নাই আনন্দিত হইয়া আশীব্বাদ করিলেন। পথে, ঘাটে, গহে, কুটীরে, শঙ্খধ্বনি হইতে লাগিল, আনন্দের ঢাক বাজিতে লাগিল, প্রবাসিগণ উপেন্দ্রনাথের উপর পাপ বর্ষণ করিতে লাগিল। প্রভাত হইতে সন্ধ্যা পৰ্য্যন্ত, সন্ধ্যা হইতে প্রভাত পৰ্য্যন্ত পরজন ও পরেনারীদিগের আনন্দলহরী বহিতে লাগিল! প্রাতঃকালে সুরেন্দ্রনাথ জোঠের চরণযুগলে প্ৰণিপাত করিয়া সাশ্রলোচনে বলিলেন,— ভ্রাতঃ! আপনার অজ্ঞাতবাসে আমি আপনার প্রতি মঙ্গেরে কত অশ্রদ্ধা দেখাইয়াছি, তাহা ক্ষমা করিবেন, আমি জানিতাম না, ভ্রমবশতঃ করিয়াছি। উপেন্দ্রনাথ উত্তর করিলেন,—সুরেন্দ্রনাথ ! তোমার ক্ষমা চাহিবার আবশ্যক নাই, জগৎসংসারে তোমার মত ভ্রাতা দলভ। তোমার সাহস, বীরত্ব ও যুদ্ধকৌশলের যশে বঙ্গদেশ যেরপে পরিপন্ণ হইয়াছে, তোমার দয়া, প্রজাবাৎসল্য ও অমায়িকতা প্রভৃতি সদগণেও আমাদের দেশ সেইরপ পরিপণ ও আনন্দিত হইয়াছে। যাঁহাদের হাতে ক্ষমতা ও ধন থাকে, তাঁহারা সকলেই যদি তোমার মত অমায়িক হইত, তাহা হইলে এ জগৎসংসার সবগ হইত। চতুরিংশ পরিচ্ছেদ : ৰিচার BEHOLD where stands The usurper's cursed head. —Shakespeare. রাজা টোডরমল্ল ইচ্ছাপারে আসিয়াছেন, আজি আনন্দে ইচ্ছাপ্রবাসিগণ মত্ত হইয়াছে। বিস্তীর্ণ ক্ষেত্রে রাজার সভা হইয়াছে, উপরে অতি বিস্তীর্ণ চন্দ্ৰাতপ লম্বিত রহিয়াছে, সেই পট্টবসন্ত্রনিমিত চন্দ্ৰাতপ জরীতে ঝলমল করিতেছে। চন্দ্ৰাতপ হইতে সন্দের ও সুগন্ধ ●학